OrdinaryITPostAd

ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে মৃত্যু ঝুঁকি? জানুন বিস্তারিত!

ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে মানুষ মারা যায়?

ডায়াবেটিস একটি জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করছে। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বা অবহেলা করলে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অনেকেই জানতে চান, ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে মানুষ মারা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর সহজ নয় কারণ এটি ব্যক্তির স্বাস্থ্য, চিকিৎসা গ্রহণের ধরন এবং জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে। তবে, রক্তের গ্লুকোজ লেভেল অত্যধিক বেড়ে গেলে বা কমে গেলে জীবন বিপন্ন হতে পারে। এই ব্লগে আমরা ডায়াবেটিসের বিপজ্জনক মাত্রা এবং মৃত্যুর কারণ বিশদভাবে আলোচনা করবো।

image

ডায়াবেটিস এবং রক্তের গ্লুকোজ লেভেলের সম্পর্ক

ডায়াবেটিস হল এমন একটি অবস্থা যেখানে দেহের অগ্ন্যাশয় (Pancreas) পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না, অথবা উৎপন্ন ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করে না। ইনসুলিনের কাজ হল রক্তের গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখা। যখন ইনসুলিনের ঘাটতি হয়, তখন গ্লুকোজ জমে গিয়ে রক্তের শর্করা বেড়ে যায়।

রক্তের গ্লুকোজ লেভেলের স্বাভাবিক মাত্রা:

  • উপবাস অবস্থায়: 70-100 mg/dL

  • খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর: 140 mg/dL এর কম

  • প্রি-ডায়াবেটিস: 100-125 mg/dL (উপবাস অবস্থায়)

  • ডায়াবেটিস: 126 mg/dL বা তার বেশি (উপবাস অবস্থায়)

রক্তের গ্লুকোজ লেভেল যদি 180 mg/dL এর বেশি হয়ে যায়, তাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। আর গ্লুকোজ লেভেল যদি 70 mg/dL এর নিচে নেমে যায়, তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। উভয় অবস্থা প্রাণঘাতী হতে পারে।

কত পয়েন্টে ডায়াবেটিস বিপজ্জনক হয়ে ওঠে?

হাইপারগ্লাইসেমিয়া (উচ্চ রক্তের গ্লুকোজ লেভেল):

রক্তের শর্করার মাত্রা যদি 300 mg/dL এর বেশি হয়, এটি একটি বিপজ্জনক অবস্থা। এমনকি গ্লুকোজ লেভেল 600 mg/dL ছাড়িয়ে গেলে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস (DKA) বা হাইপারসমোলার হাইপারগ্লাইসেমিক স্টেট (HHS) হতে পারে। এই অবস্থা জীবন হুমকির কারণ হতে পারে।

প্রধান লক্ষণসমূহ:

  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা

  • ঘন ঘন প্রস্রাব

  • দুর্বলতা ও অবসন্নতা

  • দৃষ্টি ঝাপসা

  • শ্বাসকষ্ট

  • বমি বমি ভাব

হাইপোগ্লাইসেমিয়া (নিম্ন রক্তের গ্লুকোজ লেভেল):

রক্তের শর্করার মাত্রা যদি 50 mg/dL এর নিচে নেমে যায়, তা দ্রুত চিকিৎসা না করলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে ইনসুলিন ব্যবহারকারী রোগীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি।

প্রধান লক্ষণসমূহ:

  • মাথা ঘোরা

  • ঝাপসা দেখা

  • ঘামাচি

  • দ্রুত হার্টবিট

  • ঝিমুনিভাব

  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়াে

ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুর কারণসমূহ

ডায়াবেটিস একাধিক শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যা সময়মতো চিকিৎসা না করালে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এর প্রধান কারণগুলো হল:

  1. ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস (DKA): এটি সাধারণত টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ঘটে। যখন রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বেড়ে যায় এবং ইনসুলিনের অভাব হয়, তখন দেহে অতিরিক্ত কিটোন তৈরি হয়।

  2. হাইপারসমোলার হাইপারগ্লাইসেমিক স্টেট (HHS): টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। রক্তের শর্করার মাত্রা 600 mg/dL ছাড়িয়ে গেলে এই অবস্থা হয়।

  3. হাইপোগ্লাইসেমিয়া: খুব কম গ্লুকোজ লেভেল ব্রেনের কার্যক্ষমতা বন্ধ করে দিতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হয়।

  4. কার্ডিওভাসকুলার রোগ: ডায়াবেটিস হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

  5. কিডনি ফেইলিউর: ডায়াবেটিসের কারণে নেফ্রোপ্যাথি বা কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

  6. নিউরোপ্যাথি ও ইনফেকশন: ডায়াবেটিস রোগীদের স্নায়ুর সমস্যা এবং বিভিন্ন ইনফেকশন সহজেই হতে পারে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।

উচ্চ গ্লুকোজ লেভেল থেকে বাঁচার উপায়

  1. রক্তের গ্লুকোজ নিয়মিত পরীক্ষা করা।

  2. সঠিক সময়ে ওষুধ বা ইনসুলিন নেওয়া।

  3. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা।

  4. নিয়মিত ব্যায়াম করা।

  5. চিনি এবং উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা।

  6. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও চিকিৎসা পদ্ধতি

  1. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

  2. স্বল্প গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার গ্রহণ করা।

  3. ডায়াবেটিস মনিটরিং ডিভাইস ব্যবহার করা।

  4. চিকিৎসকের পরামর্শমতো নিয়মিত চেকআপ করা।

  5. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা।

ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

ভরা পেটে রক্তের শর্করার মাত্রা (Fasting Blood Sugar Level) এবং খাবার পরের মাত্রা (Postprandial Blood Sugar Level) ডায়াবেটিস নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।

ভরা পেটে রক্তের শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা:

  • স্বাভাবিক: ৭০-১০০ মিগ্রা/ডিএল (mg/dL)
  • প্রি-ডায়াবেটিস: ১০০-১২৫ মিগ্রা/ডিএল
  • ডায়াবেটিস: ১২৬ মিগ্রা/ডিএল বা তার বেশি

খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরের রক্তের শর্করার মাত্রা:

  • স্বাভাবিক: ১৪০ মিগ্রা/ডিএল এর কম
  • প্রি-ডায়াবেটিস: ১৪০-১৯৯ মিগ্রা/ডিএল
  • ডায়াবেটিস: ২০০ মিগ্রা/ডিএল বা তার বেশি

হিমোগ্লোবিন এ১সি (HbA1c) পরীক্ষা:

  • স্বাভাবিক: ৫.৭% এর কম
  • প্রি-ডায়াবেটিস: ৫.৭% থেকে ৬.৪%
  • ডায়াবেটিস: ৬.৫% বা তার বেশি

তবে, স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে এই মাত্রা কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ব্লাড সুগার কত হলে ডায়াবেটিস হয়

রক্তে শর্করার মাত্রা (ব্লাড সুগার) ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য নির্ধারণ করতে কিছু নির্দিষ্ট মান অনুসরণ করা হয়। এটি সাধারণত তিনটি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়:

১. অভুক্ত অবস্থার ব্লাড সুগার (Fasting Blood Sugar - FBS):

  • স্বাভাবিক: ৭০ - ৯৯ mg/dL
  • প্রি-ডায়াবেটিস: ১০০ - ১২৫ mg/dL
  • ডায়াবেটিস: ১২৬ mg/dL বা তার বেশি

২. খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ব্লাড সুগার (OGTT - Oral Glucose Tolerance Test):

  • স্বাভাবিক: ১৪০ mg/dL এর কম
  • প্রি-ডায়াবেটিস: ১৪০ - ১৯৯ mg/dL
  • ডায়াবেটিস: ২০০ mg/dL বা তার বেশি

৩. এচবিএওয়ানসি (HbA1c):

  • এটি গত ২-৩ মাসের গড় রক্তে শর্করার মাত্রা প্রকাশ করে।
  • স্বাভাবিক: ৫.৭% এর নিচে
  • প্রি-ডায়াবেটিস: ৫.৭% - ৬.৪%
  • ডায়াবেটিস: ৬.৫% বা তার বেশি

নরমাল ব্লাড সুগার লেভেল চার্ট

নরমাল ব্লাড সুগার লেভেল সম্পর্কে একটি বিস্তারিত চার্ট নিচে দেওয়া হলো। এটি বয়স, সময় এবং অবস্থার ভিত্তিতে আলাদা হতে পারে।

নরমাল ব্লাড সুগার লেভেল চার্ট (mg/dL)

পরীক্ষার সময়নরমাল মানপ্রি-ডায়াবেটিকডায়াবেটিস
খালি পেটে (Fasting)70-99 mg/dL100-125 mg/dL126 mg/dL বা বেশি
খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর140 mg/dL এর কম140-199 mg/dL200 mg/dL বা বেশি
অ্যানি টাইম (Random)70-140 mg/dL-200 mg/dL বা বেশি
HbA1c (৩ মাসের গড়)5.7% এর কম5.7% - 6.4%6.5% বা বেশি

বিভিন্ন বয়সে ব্লাড সুগার লেভেল (mg/dL):

বয়সখালি পেটেখাওয়ার পর
১৮-৬৫ বছর (প্রাপ্তবয়স্ক)70-99 mg/dL140 mg/dL এর কম
৬৫ বছরের বেশি70-120 mg/dL140-180 mg/dL
শিশু (১-৫ বছর)80-110 mg/dL140 mg/dL এর কম

গর্ভবতী নারীদের ব্লাড সুগার লেভেল (mg/dL):

পরীক্ষার সময়স্বাভাবিক মান
খালি পেটে70-95 mg/dL
খাওয়ার ১ ঘণ্টা পর140 mg/dL এর কম
খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর120 mg/dL এর কম

নোট:

  • ব্লাড সুগার লেভেল নিয়মিত মনিটর করা উচিত।
  • যদি আপনার ব্লাড সুগার লেভেল স্বাভাবিকের বাইরে থাকে, তবে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • সুস্থ জীবনযাত্রা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

উপসংহার

ডায়াবেটিস একটি গুরুতর রোগ, যা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই নিয়মিত গ্লুকোজ পরীক্ষা করা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা এবং সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। রক্তের শর্করার মাত্রা 300 mg/dL এর বেশি বা 50 mg/dL এর নিচে চলে গেলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। সচেতন থাকলেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

(FAQs)

প্রশ্ন ১: রক্তের গ্লুকোজ লেভেল কত হলে বিপদজনক?

উত্তর: রক্তের শর্করার মাত্রা যদি 300 mg/dL এর বেশি বা 50 mg/dL এর নিচে চলে যায়, তা বিপজ্জনক।

প্রশ্ন ২: হাইপারগ্লাইসেমিয়া কী?

উত্তর: যখন রক্তের শর্করার মাত্রা 180 mg/dL এর বেশি হয়, তখন তাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলা হয়।

প্রশ্ন ৩: ডায়াবেটিসে কি মৃত্যু হতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে এবং সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়।

মেটা ডেসক্রিপশন:

জানুন ডায়াবেটিসের বিপজ্জনক মাত্রা, হাইপারগ্লাইসেমিয়া ও হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ এবং প্রতিরোধের উপায়। রক্তের শর্করার নিয়ন্ত্রণে সচেতন হোন।

ট্যাগ:

  • ডায়াবেটিস পয়েন্ট
  • মৃত্যু ঝুঁকি ডায়াবেটিস
  • ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট বিপজ্জনক
  • রক্তে সুগার লেভেল
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
  • মৃত্যুর কারণ ডায়াবেটিস
  • ব্লাড সুগার কত থাকলে বিপদ
  • এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url

    এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

    এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩