দুর্গাপূজা ২০২৪ গাইড
দুর্গাপূজা ২০২৪: একটি সম্পূর্ণ গাইড
দুর্গাপূজা হল বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান উৎসব। মা দুর্গার আগমন, পূজা, ও বিসর্জন—এই পুরো সময়টি বাঙালিদের জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও ভক্তির সাথে কাটে। ২০২৪ সালে দুর্গাপূজা সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসের মধ্যে পালিত হবে, এবং এখানে প্রতিটি ধাপের একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড দেওয়া হলো—প্রস্তুতি থেকে উদযাপন পর্যন্ত।
১. দুর্গাপূজার তারিখ (২০২৪ সালের জন্য)
২০২৪ সালে দুর্গাপূজা ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হবে, যা মহাষষ্ঠী এবং শেষ হবে ১৪ অক্টোবর, অর্থাৎ বিজয়া দশমীতে।
- ষষ্ঠী: ৯ অক্টোবর ২০২৪
- সপ্তমী: ১০ অক্টোবর ২০২৪
- অষ্টমী: ১১ অক্টোবর ২০২৪
- নবমী: ১২ অক্টোবর ২০২৪
- দশমী: ১৪ অক্টোবর ২০২৪
২. পূজা প্রস্তুতি: কীভাবে শুরু করবেন
২.১. ঘর পরিষ্কার ও সাজসজ্জা
দুর্গাপূজা আসার আগে ঘরকে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দরভাবে সাজানো হয়। অনেকে ঘর রঙ করেন বা আলোকসজ্জা করেন। ঘরের প্রধান দরজায় আলপনা আঁকাও বাঙালি ঐতিহ্যের একটি বড় অংশ।
২.২. মণ্ডপ নির্মাণ
বিভিন্ন স্থানে পূজার মণ্ডপ তৈরি করা হয়, যা শিল্পের অনন্য প্রতিফলন। প্রতিটি মণ্ডপের নিজস্ব থিম থাকে। মূর্তি নির্মাণও শুরু হয় এই সময়ের আগেই।
২.৩. পূজার উপকরণ সংগ্রহ
পূজার সময় প্রয়োজনীয় উপকরণগুলি সংগ্রহ করতে হয়। এর মধ্যে থাকে মাটি, ধান, দূর্বা ঘাস, শাড়ি, সিঁদুর, মালা ইত্যাদি। ফল ও মিষ্টির আয়োজনও করা হয় মা দুর্গার ভোগের জন্য।
৩. পূজার দিনগুলির উদযাপন
৩.১. ষষ্ঠী
ষষ্ঠী হলো প্রথম পূজার দিন, যেখানে মা দুর্গার বোধন হয়। প্রতিমা মণ্ডপে নিয়ে আসা হয় এবং ধুমধাম করে তাঁর আরাধনা শুরু হয়। সন্ধ্যাবেলায় আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন থাকে।
৩.২. সপ্তমী
সপ্তমীর দিন সকালে নবপত্রিকা স্নান করানো হয়। মা দুর্গার পূর্ণ উপাসনা শুরু হয় এই দিন থেকে। সকাল-বিকাল আরতি হয় এবং প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
৩.৩. অষ্টমী
অষ্টমী পূজা দুর্গাপূজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে কুমারী পূজা করা হয় এবং সন্ধিপূজাও অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে হয়, যা খুবই পবিত্র মুহূর্ত।
৩.৪. নবমী
নবমীর পূজার মাধ্যমে দুর্গার আরাধনার শেষ দিন। এরপর শুরু হয় মহা দশমীর প্রস্তুতি। নবমীর দিনও প্রসাদ বিতরণ ও আরতির আয়োজন থাকে।
৩.৫. বিজয়া দশমী
দশমীর দিন মা দুর্গার বিসর্জনের মাধ্যমে তাঁর মর্ত্য থেকে বিদায় নেওয়া হয়। সিঁদুর খেলা দশমীর অন্যতম রীতি, যেখানে বিবাহিত নারীরা সিঁদুর পরিয়ে মা দুর্গাকে বিদায় জানান এবং একে অপরকে সিঁদুর পরান। বিসর্জন শেষে শুরু হয় বিজয়া মিলন, যেখানে সবাই একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়।
৪. দুর্গাপূজা উদযাপনের বিশেষ দিক
৪.১. ভোগ এবং প্রসাদ
দুর্গাপূজার প্রতিদিনেই ভোগের আয়োজন করা হয়। নিরামিষ খাবার হিসেবে ভাত, খিচুড়ি, লাবড়া, পায়েস, মিষ্টি ইত্যাদি থাকে। ভক্তরা এটি পূজা শেষে প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করেন।
৪.২. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
পূজার সাথে সাথে বিভিন্ন মণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। নাচ, গান, নাটক, ধুনুচি নাচ এবং অন্যান্য বিনোদনের মাধ্যমে পূজার সময়কে রঙিন করে তোলা হয়।
৫. দুর্গাপূজার পরবর্তী অংশ: বিজয়া
দশমীর পরে শুরু হয় বিজয়া দশমী উদযাপন। পরিবার-পরিজনের কাছে গিয়ে প্রণাম করা ও মিষ্টি খাওয়া-খাওয়ানো হয় এই দিনে। বিশেষ করে বাড়ির বড়দের আশীর্বাদ নেওয়া ও ছোটদের মিষ্টি দিয়ে ভালোবাসা দেখানো হয়।
উপসংহার
দুর্গাপূজা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি সামাজিক মিলনও। এই দিনগুলিতে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, এবং আত্মীয়দের সাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে এক অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি তৈরি হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url