দুর্গাপূজার ইতিহাস আলোচনা
দুর্গাপূজা হল হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, যা দেবী দুর্গার পূজার মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এটি বিশেষত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, ওড়িশা, বিহার এবং বাংলাদেশের হিন্দুদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
দুর্গাপূজার ইতিহাস:
দুর্গাপূজার ঐতিহাসিক শিকড় প্রাচীন ভারতে স্থাপিত হলেও, আধুনিক রূপে এর উদযাপনের মূল সূচনা হয় প্রায় ১৬শ শতাব্দীতে। এটি প্রধানত দুইটি পর্যায়ে বিকশিত হয়েছে:
প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় ইতিহাস: দুর্গাপূজার প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় বেদ এবং পুরাণে। এই ধর্মগ্রন্থগুলিতে দেবী দুর্গার শক্তি, অসুরদের বিনাশ এবং মানবজাতিকে রক্ষা করার গল্পগুলি লিপিবদ্ধ হয়েছে। পুরাণে উল্লেখ আছে যে রাজা সুরথ প্রথম দুর্গাপূজা উদযাপন করেন। তিনি দেবী দুর্গার আশীর্বাদ পেতে পূজার আয়োজন করেছিলেন।
আধুনিক দুর্গাপূজা: আধুনিক দুর্গাপূজার সূচনা মূলত বাংলায় হয়। ষোড়শ শতাব্দীতে পশ্চিমবঙ্গের জমিদার বা স্থানীয় রাজারা প্রথম সংগঠিত দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। বিশেষত, কলকাতায় ১৭৫৭ সালে লর্ড ক্লাইভের সময় প্রথম বৃহৎ আকারে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হয়েছিল।
এই সময় জমিদারদের উদ্যোগে দুর্গাপূজা বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম অংশ হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতার বাবুরা বা অভিজাত সম্প্রদায় দুর্গাপূজাকে সামাজিক যোগাযোগ ও সম্প্রীতির উৎসবে পরিণত করেন।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব: ১৯ শতকে দুর্গাপূজা আরও বেশি সম্প্রসারিত হয়। সামাজিকভাবে এটি বাঙালি সমাজে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পূজার সময় নাটক, সংগীত, শিল্প ও সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে সমাজের সংস্কৃতিমূলক দিকগুলি সমৃদ্ধ হয়েছে।
স্বাধীনতা আন্দোলনে দুর্গাপূজা: ব্রিটিশ ভারতে জাতীয় চেতনাকে উজ্জীবিত করার জন্য দুর্গাপূজা প্রায়শই ব্যবহার করা হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতারা দেবী দুর্গাকে ভারতমাতার সঙ্গে তুলনা করে জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
সমসাময়িক দুর্গাপূজা:
বর্তমান সময়ে দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উদযাপনের মাধ্যমেও পরিচিত। প্রতি বছর এই পূজা সাড়ম্বরে পালিত হয়, যেখানে মণ্ডপগুলোকে বিভিন্ন থিমে সাজানো হয়, এবং দেশ-বিদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী আসে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url