OrdinaryITPostAd

কম্পিউটারের প্রজন্ম সমূহ

কম্পিউটারের বিবর্তনের ইতিহাসকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায়। এক একটি ধাপকে কম্পিউটারের জেনারেশন বা প্রজন্ম বলে। নিচে বিভিন্ন প্রজন্ম সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। 


প্রথম প্রজন্ম (First Generation): (১৯৪৬-৫৯)

১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত সময়কালকে কম্পিউটারের প্রথম প্রজন্ম বলা হয়। এ সময়ে পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'জন অধ্যাপক ১৯৪৬ সালে ENIAC নামের একটি কম্পিউটার তৈরি করেন। পরে Manchester বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীগণ MARK নামের একটি যন্ত্র তৈরি করেন। ১৯৪৯ সালে প্রথম মেমোরি সংবলিত কম্পিউটার EDSAC (Electronic Delay Storage Automatic Computer)  আবিস্কৃত হয়। একই সময়ে জন একার্ট ও মকলি এর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ম্যাগনেটিক টেপ মেমোরি সংবলিত BINAC আবি®কৃত হয়। ১৯৫১ সনে Remington Rand নামে একটি কোম্পানি UNIVAC-1 নামে কম্পিউটার তৈরি করে। এ কম্পিউটারে ভেকুয়্যাম টিউব ব্যবহার করা হয়। ১৯৫৪ সালে IBM-650 কম্পিউটার তৈরি হয়। এ কম্পিউটার বেশ জনপ্রিয়তা লাভে সক্ষম হয়।


প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

১. ভ্যাকুয়াম টিউবের ব্যবহার। 

২. মেশিন ভাষার মাধ্যমে প্রোগামিং কোডের ব্যবহার। 

উদাহরণঃ ENIAC,EDSAC, BINAC,UNIVAC-1, MARK, IBM-650 (বিক্রির থেকে শীর্ষে ছিল ও জনপ্রিয়) ইত্যাদি।


দ্বিতীয় প্রজন্ম (2nd Generation): (১৯৫৯-৬৫)

১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সময়কালকে কম্পিউটার দ্বিতীয় প্রজন্ম বলা হয়। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের (আইসি) যথাযথ ব্যবহার, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, কম্পিউটারের আকার হ্রাস এবং নির্ভরযোগ্যতা ইত্যাদি সাফল্যে ভরপুর কম্পিউটারের দ্বিতীয় প্রজন্ম। এ প্রজন্মের প্রথম দিকে অর্থাৎ ১৯৫৮ সালে Jack Cent Clear নামক একজন বিজ্ঞানী Transistor, Registor এবং Capacitor সমন্বিত করে একটি সার্কিট তৈরি করেন যা Integrated Circuit বা IC নামে পরিচিতি লাভ করে। দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের প্রধান পরিবর্তন ও অগ্রগতি হচ্ছে ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টারের ব্যবহার এ প্রজন্মে ১৯৬৩ সালে মার্কিন সরকার ও ইন্ড্রাস্ট্রির যৌথ উদ্যোগে ASCII (American Standard Code for Information Interchange) পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। এ সময়ে হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি সফটওয়্যারেরও প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রচেষ্টায় হাই লেভেল ভাষা হিসেবে এগুলো তৈরি করা হয়।



দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য: 

১. ট্রানজিস্টার ও ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ব্যবহার। 

২. উচ্চতর প্রোগামিং ভাষার উদ্ভব ও ব্যবহার। 

উদাহরণঃ IBM-1401, CDC-1604, RCA-501, NCR-300, Honeywell 200, IBM-1620  ইত্যাদি।


তৃতীয় প্রজন্ম (3rd Generation): (১৯৬৫-৭১) 

১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়কালকে কম্পিউটারের তৃতীয় প্রজন্ম বলা হয়। ১৯৬৪ সালে কম্পিউটারে Small Scale Integrated (SSI) সার্কিট এবং Medium Scale Integrated (MSI) সার্কিট ব্যবহৃত হয় বলে এদেরকে ট্রানজিস্টারাইড কম্পিউটারের পরিবর্তে তৃতীয় জেনারেশন বা Integrated Circuit Computer বলা হয়। এ শ্রেণীর কম্পিউটারে আউটপুট ডিভাইস হিসেবে Video Display Unit ও উচ্চগতির প্রিন্টারের প্রচলন হয় এবং সেমিকন্ডাক্টর মেমোরি ব্যবহার করা হয়েছিল। এ প্রজন্মের IBM-360 সিরিজে বিভিন্ন রকমের হার্ডডি¯ক ক্যাপাসিটিসহ ছয় ধরনের কম্পিউটার বাজারজাত করে। সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে টমাস কার্টজ এবং জন কেমেনি ইঅঝওঈ BASIC (Beginners All Purpose Symbolic Instruction Codeভাষা প্রবর্তন করেন। ওয়ার্ড প্রসেসিং এ্যাপ্লিকেশনেও এ প্রজন্মে তৈরি হয়। এ প্রজন্মের শেষের দিকে কম্পিউটার আকৃতিগতভাবে ছোট এবং অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে সাধারণের ব্যবহারের নিমিত্তে বাজারে ছাড়া হয়।



তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে বৈশিষ্ট্য: 

১. ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) এর ব্যাপক প্রচলন। 

২. অর্ধপরিবাহী স্মৃতির উদ্ভব ও ব্যবহার।

৩. উচ্চতর ভাষার উন্নয়ন ও ব্যবহার। 

৪. ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিট, লাইন প্রিন্টার ইত্যাদি আউটপুট ডিভাইস প্রচলন। 

৫. মাউসের ব্যবহার। 

উদাহরণঃ IBM-370, PDP-8, PDP-2, GE-600 ইত্যাদি এ প্রজন্মের কম্পিউটার।


চতুর্থ প্রজন্ম (4th Generation): (১৯৭১-Present

১৯৭১ সাল থেকে চতুর্থ প্রজন্ম শুরু হয়েছে বলে মনে করা হয়। Large Scale Integration এবং Very Large Scale 'Integration মাইক্রোপ্রসেসর এবং Semi Conductor Memory দিয়ে এ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলাকে তৈরি হয়। এ প্রজন্মেই বেল ল্যাবরেটরির দুজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী কর্তৃক UNIX অপারেটিং সিস্টেম উদ্ভাবিত হয়। এ প্রজন্মেই কম্পিউটারের স্মৃতি সমৃদ্ধ হতে থাকে। ROM (Read Only Memory), PROM (Programmable Read Only Memory), EPROM (Erasable Programmable Read Only Memory) এ প্রজন্মে আবি®কৃত হয়। উইন্ডোজ, ডস (DOS) অপারেটিং সিস্টেম দু'টি ব্যবহার এ প্রজন্মে শুরু হয়েছে। CRAY-1 নামের সুপার কম্পিউটারটি প্রথম বাজারজাত করা হয় ১৯৭৬ সালে। ১৯৮১ সালে আইবিএম কোম্পানি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রথম মাইক্রোাকম্পিউটার তৈরি করা শুরু করে। আইবিএমের পাশাপাশি Heulett-Packard, 3D.com সহ বিভিন্ন কোম্পানি পারসোনাল কম্পিউটার তৈরিতে এগিয়ে আসে। বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে আন্তঃপ্রতিযোগিতা শুরু হয় মাইক্রোাপ্রসেসরের স্পীড বাড়ানো নিয়ে। ৬৬ মেগাহার্টজ প্রসেসর থেকে বাড়তে বাড়তে ১ গিগাহার্টজ প্রসেসর আসে, তারপর ২ গিগাহার্টজ, ৩ গিগাহার্টজ স্পীডের প্রসেসর বাজারে আসে। এ প্রজনেই আসে হাইপার .থ্রডিং নামের নতুন প্রযুক্তি। যার রেশ ধরে গবেষণা চলে প্যারালাল প্রসেসর ব্যবহারের।


চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য: 

১. মাইক্রোপ্রসেসর এর উদ্ভব ও ব্যবহার। 

২. বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার। 

৩.www, HTML , DVD , ipod  ইত্যাদি আবিষ্কার। 

উদাহরণঃ IBM-3033, HP-3000, IBM-4341, TRS-40, IBM PC ইত্যাদি এ প্রজন্মের কম্পিউটার।


পঞ্চম প্রজন্ম (5th Generation): 

পঞ্চম প্রজন্মে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে parallel processing নিয়ে গবেষণা ও প্রয়োগ। যদিও চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার তুলনামূলকভাবে কম দামের জন্য পঞ্চম প্রজন্মে ব্যবহৃত হচ্ছে তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওয়ার্ড প্রসেসিং এর বিভিন্ন কাজ-কর্মে। বিভিন্ন এপ্লিকেশন সফটওয়্যারের নতুন নতুন আপগ্রেড ভার্সন বাজারে আসার পর দ্রুতগতির কম্পিউটার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার সে চাহিদা মেটাতেই parallelism নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ইতঃপূর্বে পাইপলাইন ও ভেক্টর প্রসেসিংএর ক্ষেত্রে প্যারালাল প্রসেসিং ব্যবহার করা শুরু হয়।


পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য: 

১. AI (Artificial Intellegence-কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এর ব্যবহার। 

২. ওপেন সোর্স বিভিন্ন প্রোগ্রামের অনেক ব্যবহার। 

৩. নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণের দ্বারা কম্পিউটার ব্যবহার। 

উদাহরণঃ DEV VAX-780, Intel iPSC-1 ইত্যাদি।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩