কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে - কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৪
কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে এ বিষয়ে বেশিরভাগ মুসলিম জানতে আগ্রহী। বিশেষ করে প্রতিবছর রোজার ঈদ উৎসবের পর কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৪ এ কবে হবে এই প্রশ্নটিই সবার আগে আসে।
মুসলমানদের দুটি ধর্মে উৎসবের মধ্যে একটি হচ্ছে কুরবানির ঈদ। আর বাংলাদেশে ঈদুল আযহা ২০২৪ সালের কত তারিখে তা বর্তমানে বহুল আলোচিত প্রশ্ন। কারণ মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে ঈদ উপলক্ষে আমেজই আলাদা।
পেজ সূচিপত্রঃ কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে
- কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে
- কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৪
- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এর সময়ের পার্থক্য
- ২০২৪ সালের কোন মাসে ঈদুল আযহা
- সৌদি আরবে কোরবানি ঈদ ২০২৪ এর তারিখ
- কুরবানির ঈদের সূচনা
- কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে ও কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৪ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন
- ঈদ উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হাদিস
- জ্বিলহজ্জ মাস বা ঈদের মাসের ফজিলত
- বাংলাদেশে কুরবানির ঈদ উপলক্ষে সরকারি ছুটি
- ঈদ-উল-আজহা পালনের উদ্দেশ্য ও নিয়ম
- কোরবানি বিষয়ক শর্ত
- কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে এ বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্ন
- কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে ও কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৪ বিষয়ে লেখকের মন্তব্য
কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে
কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে জানার আগ্রহের কারণ ঈদ মুসলমানদের জন্য একটি ধর্মীয় পবিত্র উৎসব। মুসলমানের দুটি ঈদ রয়েছে, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। আমরা আজ ২০২৪ সালের জন্য ঈদুল আযহা বিষয়ক আলোচনা করছি। ঈদুল আযহা মানে ত্যাগের উৎসব। একে কুরবানির ঈদও বলা হয় কারণ এই ঈদে পশু কোরবানি দেওয়া হয়।
ঈদুল আযহার প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ত্যাগ। এই দিনে মুসলমানরা নিয়ম অনুযায়ী ভোর বেলা ফজরের নামাজ পড়ার পর সকাল বেলা ঈদের নামাজ পড়তে যান এবং এরপরে পশু কোরবানি দেওয়া শুরু হয়। সবাই সবার সামর্থ্য অনুযায়ী গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট যেকোনো পশু কোরবানি দিতে পারেন।
২০২৪ সালের কোরবানির ঈদ কত তারিখে হবে বেশিরভাগ মানুষই এ বিষয়ে জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন। মূলত প্রতিবছরই ঈদুল আযহা আরবি ক্যালেন্ডার অনুসারে জ্বিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ইসলামের পঞ্জিকা যা চন্দ্রের উপর নির্ভর করে দেখা হয় সে অনুযায়ী জ্বিলহজ্জ মাসের চাঁদের উপর নির্ভর করে এই তারিখ একদিন কমবেশি হতে পারে।
আর ২০২৪ সালে ঈদুল আযহা ১৭ জুন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে যদি চাঁদ একদিন পরে ওঠে তবে ১৮ তারিখেও হতে পারে। তবে ঈদের প্রস্তুতি রোজার ঈদের পর থেকেই শুরু হয়ে যায়। কারণ রোজার ঈদের দুই মাস দশ দিন পরেই কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হয়। তাই রোজার ঈদ পালন করার পরপরই সবাই কোরবানির ঈদ কবে সে ব্যাপারে আগে থেকেই ব্যাকুল হয়ে থাকেন।
আরো পড়ুনঃ পুরুষ সাহাবীদের নামের তালিকা অর্থসহ ও ৩১৩ জন বদরী সাহাবী
কোরবানির ঈদ এর মূল উদ্দেশ্য পশু কোরবানি দেওয়া। মুসলিম ধর্ম মতে নিয়ম অনুসারে প্রতিবছরই সাড়ে ৭ তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা এ পরিমাণ সম্পদ অথবা জমানো টাকার উপর নির্ভর করে পশু কোরবানি দিতে হয়। এবং কয়েক অংশে বিভক্ত করে এই কুরবানির মাংস মানুষের সাথে শেয়ার করা এই উৎসবের মূল আনন্দের বিষয়।
কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৪
কোরবানির ঈদ বা ঈদ এর তারিখ সাধারণত আরবি মাসের দ্বারা নির্ধারিত হয়। আর আরবি ক্যালেন্ডার চাঁদের উপর নির্ভর করে পরিবর্তন হতে থাকে। এ অনুযায়ী ২০২৪ সালে কোরবানির ঈদ সম্ভাব্য ১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণত চাঁদ ওঠার উপর নির্ভর করে এই তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।
নিয়ম অনুসারে প্রতিবছর রোজার ঈদের ৭০ দিন পর ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হয়। এবং গত ১১ এপ্রিল বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তার ঠিক ২ মাস ১০ দিন পর ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হবে।পাঁচ বছরে ঈদুল আযহা যেসব দিনগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বা হবে তার তালিকা দেওয়া হল।
- ২০২২ সাল- ১০ জুলাই- রবিবার- ঈদুল আযহা
- ২০২৩ সাল- ২৯ জুন- বৃহস্পতিবার- ঈদুল আযহা
- ২০২৪ সাল- ১৭ জুন- সোমবার- ঈদুল আযহা
- ২০২৫ সাল- ৬ জুন- শুক্রবার- ঈদুল আযহা
- ২০২৬ সাল- ২৭ মে- বুধবার- ঈদুল আযহা
এবং মুসলিমরা এই দিন কোরবানি দিয়ে থাকেন আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য। আর বাংলাদেশের সাধারণত মধ্যপ্রাচ্য যেমন সৌদি আরব, ওমান, কাতার, আরব আমিরাত এই সব দেশের কোরবানির ঈদ এর পরের দিন বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হয়ে হয়। তবে যদি বাংলাদেশের চাঁদ আগে দেখা যায় তবে একই দিনেও অনুষ্ঠিত হতে পারে।
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এর সময়ের পার্থক্য
কুরবানির ঈদ ও রোজার ঈদ প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট সময়ে পালিত হয়। এই ঈদ দুটির ফজিলত এবং উদ্দেশ্য আলাদা হলেও ঈদ দুটি উৎসব আনন্দের এবং ত্যাগের। প্রতিবছরই আরবি মাস অনুযায়ী দুটি ঈদ পরপর পালিত হয়। ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা এর সময়ের পার্থক্য খুবই কম। একটি থেকে আরেকটি ৭০ দিনের ব্যবধানে পালিত হয়ে থাকে।
রমজান মাসে ৩০ দিন রোজা রাখার পর ঈদুল ফিতর পালন করতে হয়। রমজান মাস ধরে সূর্যাস্ত ও সূর্যাদয় পর্যন্ত খাওয়া যায় এবং তারপর সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয়। এই মাস ঈর্ষা, রাগ, সমস্ত খারাপ ইচ্ছা ও ত্যাগের মাস হিসেবে পরিচিত। ধর্মমতে রমজান মাসে হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর কাছে কোরআন নাযিল হয়। এই ঈদ ও চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করেই পালিত হয়।
আরো পড়ুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়
এরপর আসে কুরবানির ঈদ। এই ঈদে রোজা না রাখা লাগলেও জিলহজ্জ মাসের ১০, ১১, ১২ তারিখ পরশু কোরবানি দিতে হয়। ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে এই ঈদের নিয়ম পশু কোরবানি দেওয়া। সাধারণত পরশু কোরবানি দেওয়ার পর তিন ভাগ করা হয়। এক ভাগ গরিব মিসকিনদের দিতে হয়। আরেক ভাগ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হয়। আর বাকি ভাগ টি নিজের জন্য রাখতে হয়।
২০২৪ সালের কোন মাসে ঈদুল আযহা
কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে এবং কোন মাসে এ বিষয়ে আমরা এখন বিস্তারিত আলোচনা করব। মূলত আরবি মাসের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কোরবানির ঈদ জ্বিলহজ্জ মাসে অনুষ্ঠিত হয়। জ্বিলহজ্জ মাস খুবই ফজিলতপূর্ণ এবং হজ্জের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে যেমন কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হয় তেমনি হজ্জ পালনের আদর্শ সময়।
জ্বিলহজ্জ মাস আরবি মাসের সর্বশেষ মাস। আরবি ১২ মাস সম্মিলিত একটি বছর। 12 টি মাসের মধ্যে সর্বপ্রথম মাস মুহররম এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানি, জমাদিউল আউয়াল, জমাদিউস সানি, রজব, শা'বান, রমজান, শাওয়াল, জ্বিলকদ ও জ্বিলহজ্জ। প্রতিটি মাসেরই আলাদা ফজিলত ও বর্ণনা রয়েছে।
ইসলামি পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতিটি মাস নতুন চাঁদের চক্রের অনুসারে শুরু হয়। চাঁদের নির্দিষ্ট প্রস্তুতির মাধ্যমে আগের মাসের সমাপ্তি হয়ে থাকে এবং নতুন মাস শুরু হয়। তাই নিয়ম অনুসারে জ্যোতির বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী আরবি মাস প্রত্যেকটিই ২৯ বা ৩০ দিন হতে পারে। কোন কোন অনুসারীরা এক্ষেত্রে আবার দ্বিমত পোষণ করে থাকেন।
হিজরি বর্ষপঞ্জিকা বা ইসলামি বর্ষ পঞ্জিকা সাধারণত ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিন বিশিষ্ট হয়ে থাকে। ইসলামি বর্ষপঞ্জিকা হিজরী সন ব্যবহার করা হয় এবং ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হিজরি বর্ষপঞ্জিকা গণনা করা শুরু হয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীগণদের নিয়ে মক্কা থেকে মদিনা স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। এবং এই ঘটনাকে হিজরত বলা হয়।
সৌদি আরবে কোরবানি ঈদ ২০২৪ এর তারিখ
কোরবানির ঈদ ২০২৪ সৌদি আরবে কবে অনুষ্ঠিত হবে এ ব্যাপারে সকলেরই আগ্রহ বেশি থাকে। কারণ সৌদি আরবের ঈদের সময় অনুসারেই বাংলাদেশের ঈদের সময় নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ঠিক পরের দিনই বাংলাদেশে ঈদ অনুষ্ঠিত হয়। তাই এই দেশগুলোতে কবে ঈদ হচ্ছে তা জানলে ঈদের দিন নির্ধারণ করা সুবিধা হবে।
আর সৌদি সরকার ও রোজার ঈদের পরপরই ঘোষণা করেছেন যে কোরবানির ঈদ আগামী ১৬ জুন পালিত হবে। তাই সে অনুযায়ী কোরবানির ঈদ হচ্ছে ১৭ তারিখ। কিন্তু যেহেতু আরবি মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে শুরু হয়ে থাকে তাই কুরবানির ঈদের তারিখ একদিন আজ পিছ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুরবানির ঈদের সূচনা
কুরবানির ঈদ বিষয়ক প্রশ্ন করার সময় অবশ্যই অনেকের মাথায় আসে কোরবানি ঈদ এর সূচনা কিভাবে হল। এই ঈদ এর ইতিহাস কি। যেহেতু ২০২৪ সালের কোরবানির ঈদ এর তারিখ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই ঈদ উপলক্ষে বেশ কিছু পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে তাই প্রস্তুতির কারণ হিসেবে আমাদের কোরবানি ঈদের ইতিহাস সম্পর্কে জানাও জরুরী।
ইসলামে বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ তাআলা রাসূল হযরত ইব্রাহিম আঃ কে স্বপ্নে জানিয়েছিলেন তার কোন একটি প্রিয় বস্তুকে যেন তিনি কোরবানি দেন। আল্লাহ বলেছিলেন তুমি তোমার প্রিয় কোন বস্তুকে আমার নামে কোরবানি করো। এ সময় ইব্রাহিম আঃ স্বপ্নের আদেশ স্বরূপ দশটি উট কোরবানি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আবারো তিনি একই স্বপ্ন দেখেন। এবং পরে তিনি ১০০ টি উট কোরবানি দেন। কিন্তু পুনরায় তিনি আবারও একই স্বপ্ন দেখেন।
আরো পড়ুনঃ ৭৮৬ বার বিসমিল্লাহ পড়ার ফজিলত - বিসমিল্লাহর আশ্চর্যজনক ফজিলত
এ সময় তিনি দেখেন যে তার কাছে এখন তার সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাইল ছাড়া আর কোন প্রিয় বস্তু নেই। তাই তিনি আর কিছু চিন্তা না করে তার পুত্রকেই কুরবানীর জন্য আরাফাতের ময়দানে নিয়ে যান। এই সময় শয়তান ও আল্লাহর আদেশ পালন থেকে বাধা দেওয়ার জন্য ইব্রাহিম এবং তার পরিবারকে কুমন্ত্রণা দিছিল, তাই তার পরিবার শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরেছিল।
তারপর যখন তিনি কোরবানি করার জন্য পুত্রকে বসালেন এবং ছুরি চালানোর চেষ্টা করলেন তখন তিনি হঠাৎ দেখতে পান যে তার পুত্রের বদলে একটি প্রাণী কোরবানি হয়ে গিয়েছে এবং তার পুত্রের কোন ক্ষতি হয়নি। এভাবেই নবী আল্লাহর আদেশ পালন করার মাধ্যমে কঠিন পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করেন।
এই নিয়ম অনুসারে প্রতিবছর হজ্জের সময় আমরা আরাফাতের ময়দানে হেঁটে হেটে যাই, পাথর নিক্ষেপ করি এবং কোরবানি দেই। এই সময় হজ্জ করা সবচেয়ে সওয়াবের। এবং আরাফার ময়দানে গিয়ে পশু কোরবানি দিতে হয়। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের অবশ্যই হজ্জ পালন করা জরুরী এবং কোরবানি দিতে হবে।
এবং ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘটনাকে সাক্ষী রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় প্রতিবছর এই দিনটি পালন করা হয় উৎসব এবং ত্যাগের মাধ্যমে। হিজরির বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে জ্বিলহজ্জ মাসের এই ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত কোরবানি দেওয়া যায়। এবং চন্দ্র মাসের গণনা অনুসারে জ্বিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখেই কোরবানির ঈদ পালিত হয়।
কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে ও কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৪ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের কুরবানি ঈদ কবে অনুষ্ঠিত হবে?
উত্তরঃ প্রতি বছর জ্বিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে যেহেতু কোরবানি ঈদ পালিত হয় তাই এ বছরও ইংরেজি বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী ১৭ জুন কোরবানির ঈদ হবে।
প্রশ্নঃ ২০২৪ সালের ঈদুল আযহা কত তারিখে?
উত্তরঃ ২০২৪ সালের ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হবে ১৭ জুন।
প্রশ্নঃ ২০২৪ সালের ঈদ কয়টি?
উত্তরঃ ২০২৪ সালে ঈদ অনুষ্ঠিত হবে দুইটি। একটি রোজার ঈদ এবং একটি কোরবানির ঈদ। রোজার ঈদ অনুষ্ঠিত হয়েছে ১১ এপ্রিল এবং কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হবে ১৭ জুন।
প্রশ্নঃ কুরবানির ঈদের লক্ষ্য কি?
উত্তরঃ কোরবানির ঈদের মূল লক্ষ্য ত্যাগ।
ঈদ উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হাদিস
২০২৪ সালের ঈদুল আযহা কত তারিখে এ বিষয়ে জানার আগে আমাদের প্রথমে ঈদ সম্পর্কে কিছু হাদিস জানা জরুরী। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম এর জবান কিছু সাহাবি লিখে রাখতেন। এগুলোই হাদিস। এখন ঈদ সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বক্তব্য উল্লেখ করা রয়েছে। এই হাদিস সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা জরুরী।
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে একটি ঘটনা। একবার মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় আসেন তখন মদিনা বাসিকে উৎসব করতে দেখেন। মহানবী তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কেন তারা এই দুটি উৎসব পালন করে। তারা বলেছিল তারা প্রাক ইসলামী যুগে এই দুটি উৎসব পালন করতো তাই তারা এখনো সেটা পালন করছে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখলেন তারা নাচ-গান করে আনন্দ ফুর্তি করে খারাপ উপায়ে উৎসব পালন করছে। এ বিষয়টি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পছন্দ হয়নি। তাই তিনি বললেন আপনারা এই দুটি উৎসবের পরিবর্তে মুসলিম নিয়ম অনুসারে অন্য উৎসব পালন করুন। একটি হচ্ছে ঈদুল আযহা এবং অন্যটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর।
এই দুইটি দিন যেহেতু মুসলমানদের জন্য অনেক ফজিলত পূর্ণ এবং অর্থপূর্ণ তাই নিয়ম অনুসারে এবং উৎসবমুখর ভাবে এ দুটি উৎসবে আনন্দের সাথে পালন করা মুসলমানদের জন্য তখন থেকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এই হাদীসটি সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১১৩৪, সুনানে নাসায়ী, হাদিস নম্বর ১৫৫৬ এবং মুসনাদে আহমদ, হাদিস নম্বর ১২০০৬ এ উল্লেখ করা আছে।
জ্বিলহজ্জ মাস বা ঈদের মাসের ফজিলত
কুরবানির ঈদ কবে এ বিষয়ে সবাই যেমন আগ্রহী তেমনি সবাই এ বিষয়েও জানতে চায় যে জ্বিলহজ্জ মাস বা ঈদের মাসের ফজিলত কিরকম। আরবি মাসের জ্বিলহজ্জ মাস খুবই ফজিলতপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে হজ্জ পালন করা ফরজ। এই মাসে হাজিরা হজ্জ পালন করতে আসেন। এবং আরাফার ময়দানে এসে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
আর এখানে দোয়া করলে মুসলমানদের দোয়া কবুল হয়। এবং হাজীরা সারা দুনিয়ার মুসলমানদের জন্য দোয়া করেন এবং রোজা রাখেন। এক হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, এক লোক নবীজি কে জিজ্ঞাসা করছিলেন জিলহজ মাসের ৯ তারিখের আরাফাতের দিন আমরা কেন রোজা রাখব, এটা কি গুরুত্বপূর্ণ?
তখন নবীজি বলেছিলেন যদি কেউ আরাফাতের দিন রোজা রাখেন তবে তার দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এই দুই বছরের মধ্যে একটি আগের বছর এবং আরেকটি পরের বছর। তাছাড়াও একটি মুমিন ব্যক্তির জীবিত থাকা অবস্থায় সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার কাছে ইবাদত করাই প্রধান উদ্দেশ্য। কোরবানি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নৈকট্য লাভ সহজ করে দেয়।
এবং মুমিনরা তাদের সম্পদ, জীবন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেন। এবং তারা তাদের খারাপ অভ্যাস হিংসা বা কৃপণতা ত্যাগ করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে ওঠেন। আবার ঈদুল আযহা উদযাপনের দ্বারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নবী হযরত ইব্রাহীম আঃ এবং হযরত ইসমাইল আঃ এর আল্লাহর প্রতি অনুগত্য ও ত্যাগের মহৎ স্মৃতি মুসলিমরা ধারণ করতে পারেন।
বাংলাদেশে কুরবানির ঈদ উপলক্ষে সরকারি ছুটি
কোরবানির ঈদ কবে সে বিষয়ে জানার প্রধান আগ্রহ থাকে কারণ ছুটির বিষয় রয়েছে। ২০২৪ সালের ঈদুল আযহার জন্য কতদিন সরকারি ছুটি পাওয়া সম্ভব এ বিষয়ে সবাই হিসাব করছেন। যেহেতু ঈদের ছুটি সকলেই অনেক দিন ধরে বাড়িতে সবার সাথে উদযাপন করতে চান তাই এই ছুটি বিষয়ক এত হিসাব নিকাশের প্রয়োজন পড়ে।
যেহেতু ঈদ খুব কাছেই বাংলাদেশে ১৭ জুন উদযাপিত হওয়ার কথা রয়েছে সেক্ষেত্রে ঈদের ছুটি শুরু হবে ১৬ তারিখ থেকে। এবং এর ছুটি চলবে ১৮ তারিখ পর্যন্ত। যেহেতু ১৮ তারিখ মঙ্গলবার এবং এরপর বুধ বৃহস্পতি এই দুইদিন সপ্তাহের আর বাকি থাকে তাই যদি কোনোভাবে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ছুটি নেওয়া যায় তবে অবশ্যই ছুটি বাড়ানো সম্ভব হবে।
আবার এদিকে বুধবার ও বৃহস্পতিবারের পর শুক্র শনি এমনিতেই সরকারি ছুটি। এবং শুরুতে ১৬ তারিখ সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার সত্ত্বেও যেহেতু ১৪ তারিখ শুক্র বার তাই বিশাল একটি ছুটির সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য যদি ১৯ ও ২০ ২০ তারিখ ছুটি ম্যানেজ করা যায় তাহলে টানা ৯ দিনের ছুটি কাটানো সম্ভব হবে। মানে ১৪ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত ঈদের ছুটি কাটাতে পারবেন।
ঈদ-উল-আজহা পালনের উদ্দেশ্য ও নিয়ম
২০২৪ সালের ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে আমরা অনেক তথ্যই জানতে পেরেছি। কিন্তু আমরা ঈদ-উল-আজহা পালনের উদ্দেশ্য যদি না জানি তাহলে আমাদের উৎসব পালনের কোন মর্ম থাকেনা। এবং উৎসব পালন করলেই হবে না নিয়ম-কানুন সম্পর্কে আমাদের জানা জরুরী। এজন্য ঈদ-উল-আজহা পালন করার জন্য উদ্দেশ্য এবং নিয়ম কি অবশ্যই আমাদের জানতে হবে।
ঈদ-উল-আজহা পালনের উদ্দেশ্য
ত্যাগ এবং আল্লাহর প্রতি আস্থাঃ ঈদ-উল-আজহা মুসলমানদের আল্লাহর প্রতি আত্মত্যাগ এবং লোভ লালসা সমর্পণের মাধ্যম শেখায়।
সামাজিক বন্ধন বৃদ্ধিঃ সকলের মধ্যে ভালো সম্পর্ক, সহমর্মিতা তৈরি করা।
মানুষকে সাহায্য করাঃ অসহায় এবং গরিব দুঃখীদের সাথে দয়া ও সহমর্মিতা এবং বিপদে আপদে রক্ষা করার অভ্যাস তৈরি করার শিক্ষা দেয়।
ঈদ-উল-আজহা পালনের নিয়ম
- ঈদুল আযহা জ্বিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে পালিত হয়।
- ঈদ উপলক্ষে গোসল করে সকালবেলা নতুন কাপড় পড়ে নামাজ আদায় করা।
- এবং নামাজের পর কোরবানি দিতে হয়।
- কোরবানির মাংস অবশ্যই তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। এক ভাগ নিজের আরেক ভাগ আত্মীয়-স্বজন এবং অন্য ভাগ গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে।
কোরবানি বিষয়ক শর্ত
কোরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে এ বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ ধারণা রাখলাম কিন্তু কোরবানির ঈদ বিষয়ক বেশ কিছু শর্ত রয়েছে এটা আমাদের অবশ্যই মেনে চলা জরুরী। যেহেতু কোরবানির ঈদ ত্যাগের উৎসব এবং এ সময় কোরবানি করার প্রয়োজন পড়ে। তাই কুরবানি বিষয়ক বেশ কিছু শর্ত আমাদের অবশ্যই জানতে হবে।
তাই কোরবানির জন্য নিচের শর্তগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- কুরবানি করার জন্য অবশ্যই যে কুরবানি দিবেন তাকে মুসলিম হতে হবে।
- যদি কোরবানি করার জন্য বয়স হয় তবে অবশ্যই কুরবানি দেওয়া জরুরী।
- স্বাধীন হতে হবে।
- এবং যে কুরবানি দিবেন তাকে তার সম্পদের পরিমাণ এর উপর নির্ভর করে কোরবানির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
আর কুরবানীর যে দিবেন তার অবশ্যই সাড়ে ৭ তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা সেই পরিমাণ অর্থ সম্পদ থাকতে হবে। ঈদুল আযহার দিন সূর্যোদয় থেকে ঈদুল আযহার দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোরবানি দেওয়া যায়। এবং আশা করি এই উক্ত সত্য গুলো মেনে নিয়ে আপনারা কোরবানির ঈদের জন্য কুরবানী দেওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে এ বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্ন
প্রশ্নঃ কোরবানির ঈদের ছুটি কতদিন পাবো?
উত্তরঃ কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ছুটি সরকার এটিএম অনুযায়ী ৫দিন পাওয়া যাবে।
প্রশ্নঃ ২০২৫ সালে কোরবানির ঈদ কবে হবে?
উত্তরঃ ২০২৫ সালের কুরবানি ঈদ অনুষ্ঠিত হবে ৬ জুন।
প্রশ্নঃ কুরবানি ঈদের অর্থ কি?
উত্তরঃ কোরবানি ঈদ এর অর্থ ত্যাগের উৎসব।
প্রশ্নঃ পশু কোরবানি দিয়ে কয় ভাগ করতে হয়?
উত্তরঃ পশু কোরবানির মাধ্যমে কোরবানির মাংস তিনভাগ করতে হয়। একভাগ নিজের, আরেক ভাগ আত্মীয়-স্বজন এবং অন্য একটি ভাগ গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হয়।
কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে ও কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৪ বিষয়ে লেখকের মন্তব্য
কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে ও কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৪ বিষয়ে আমরা আজ বিস্তারিত অনেক কিছুই জানতে পারলাম। ঈদ মুসলমানদের একটি পবিত্র ধর্মীয় উৎসব। মুসলমানদের দুটি ঈদের মধ্যে কুরবানির ঈদ অন্যতম। ঈদের মাসে ঈদ উপলক্ষে মুসলমানদের আপন খুশি ও আনন্দের শেষ নেই।
আশা করি আমরা সকলেই সঠিক নিয়মে আমাদের দায়িত্ব গুলো ঈদ উপলক্ষে পালন করতে পারবো। ঈদের আনন্দ সকল মানুষের সাথে মিলেমিশে আদান প্রদান করবো। যেহেতু কোরবানি বলতে উৎসর্গ বোঝায় তাই আশা করি আমরা সকলেই এই ঈদের উদ্দেশ্য মাথায় রেখে, সকলের প্রতি দায়িত্ব পালন করে, ঈদের আনন্দ সকলের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে পারি। 2024112
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url