কেশর আলু খাওয়ার ১৬ উপকারিতা ও ০৭ অপকারিতা
কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা বা ঠাণ্ডা আলু সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। কেশর আলু এক ধরনের আলু যা খেতে খুবই মিষ্টি হয়ে থাকে। আমরা আজকে কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারব।
কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। আমরা আজকে এই আর্টিকেলে কেশর আলু সম্পর্কিত সব ধরনের উপকারী এবং আলু সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি।
পেজ সূচিপত্রঃ কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা
- কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা
- কেশর আলু খাওয়ার অপকারিতা
- কেশর আলুর পুষ্টিগুণ
- ঠান্ডা আলুর পরিচিতি
- কেশর আলুর উৎপাদন খরচ
- কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন
- কেশর আলু চাষ পদ্ধতি
- মিষ্টি আলু খাওয়ার উপকারিতা
- অতিরিক্ত আলু খেলে শারীরিক সমস্যা
- রূপচর্চায় আলুর ব্যবহার
- কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ক আরো কিছু প্রশ্ন
- কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ে লেখকের মন্তব্য
কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা
কেশর আলু সাধারণ আলুর একটি জাত। বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে এটি প্রচুর উৎপাদন হয়। এটি মিষ্টি এবং ছোট সাদা রংয়ের একটি সবজি। রান্না না করে এমনিতে চাবায়ও খেয়ে ফেলা যায়। যেহেতু অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল তবে এতটাও মিষ্টি নয় একটু পানসে ধরনের।
আমরা সকলে কেশর আলু সম্পর্কে ধারণা রাখলেও এর উপকারিতা বিষয়ে তেমন কোন তথ্য জানিনা। শরীরের এনার্জির জন্য বা ত্বকের সুস্থতার জন্য অথবা বিভিন্ন ধরনের রোগের সমাধানের জন্য এর উপকারিতা অপরিসীম। বাংলাদেশে খুব কম মূল্যে কেশর আলু কিনতে পাওয়া যায়। যেহেতু সহজলভ্য এবং দামের সাশ্রয়ী তাই শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
ত্বকের সুস্থতায় কেশর আলু
কেশর আলুতে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। আর আমরা সকলেই জানি ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য এবং ত্বক ভালো রাখার জন্য ত্বকের অবাঞ্ছিত দাগ দূর করার জন্য ভিটামিন সি এর প্রয়োজনীয়তা অনেক।
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান যদি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কেশর আলুতে পাওয়া যায় তবে অবশ্যই ত্বক অনেক ভালো থাকবে। এছাড়া ত্বকে ঠান্ডা করে। ত্বকের ph এর মাত্রা ঠিক রাখে। তাই ত্বকের সুস্থতার জন্য এবং ভালো রাখার জন্য নিয়মিত কেশর আলু খাওয়া জরুরি। এছাড়া কেশর আলু হালকা পিছে যদি ত্বকে ১৫ মিনিটের মতো রেখে দেন উপকার পাবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে কেশর আলু
কেশর আলুতে অনেক ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে সাহায্য করে। পেট পরিষ্কার করে ফেলে। কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক পিরাদায়ক একটি সমস্যা। যা পরবর্তীতে বড় ধরনের সমস্যায় রূপ নিতে পারে। তাই কোষ্টকাঠিন্য সমস্যা দেখা দিলে নিয়মিত কেশর আলু খাওয়া শুরু করবেন।
আরও পড়ুনঃ দুর্গন্ধযুক্ত পাদ থেকে মুক্তির উপায়
কেশর আলু শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য দুর্ঘটনা আরো অনেক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর ভূমিকা অপরিসীম।
চোখের সমস্যার সমাধানে কেশর আলু
চোখের সমস্যা ইদানিং সব মানুষেরই ব্যাপক। বড় ছোট সকলেই এই সমস্যায় ভোগেন। বাচ্চাদের জন্য এটি বেশি সমস্যার কারণ কম বয়সেই তারা চোখের সমস্যায় কিছু দেখতে পারে না। এর কারণ ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবারের অভাব। কেশর আলুতে ভিটামিন এ প্রচুর পরিমাণে থাকে।
যা সহজেই চোখের সমস্যা সমাধানের সাহায্য করে। এজন্য নিয়মিত বাচ্চাদের কেশর আলু খাওয়ানো জরুরী। এছাড়া শীতকালেও বাচ্চাদের যে বিভিন্ন রকম ঠান্ডার সমস্যা হয় কেশরের আলু খাওয়ালে সেই সমস্যারও সমাধান পাওয়া যায়।
হার্টের সুস্থতায় কেশর আলু
হার্ট মানুষের শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই হার্টের সুস্থতা খুবই জরুরী। আমাদের অনেকেরই দেখা যায় হার্টের সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে বয়স বেশি হয়ে গেলে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। কিন্তু হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য যদি আমরা আগে থেকেই সাবধান থাকি তবে আমাদের হার্ট ভালো থাকবে।
তাই কেশর আলুতে রয়েছে হার্ট ভালো থাকার উপকারী উপাদান। তাই শুরু থেকেই হার্ট এর উন্নতির জন্য নিয়মিত কেশর আলু খাওয়ার অভ্যাস করা জরুরী। অবশ্যই কেশর আলু কাঁচা কেটে খেতে হবে। এতে শরীর সুস্থ থাকবে এবং হার্টের ভালো হবে।
রক্তশূন্যতার সমস্যায় কেশর
রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দিলে প্রচুর পরিমাণে কেশর আলু খাওয়া জরুরী। কেশর আলু রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য কেশর আলু খাবেন। তাই ভেষজ উপায়ে কেশর আলু খেলে রক্তশূন্যতার সমস্যা নিমিষেই দূর হবে।
শরীরের পানির অভাব হলে কেশর আলু
কেশর আলুকে ঠান্ডা আলুও বলা হয়। কারণ কেশোর আলোতে অনেক পরিমাণে পানি রয়েছে। যা আপনার শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। পানি শূন্যতা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। পানি শূন্য হয়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর ভাব দেখা দেয়। তাই নিয়মিত পানি খাওয়া জরুরী এবং সাথে কেশর আলুও খাবেন।
শক্তির উৎস হিসেবে কেশর আলু
এনার্জির উৎস রয়েছে এমন ধরনের খাবার খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এর মধ্যে কেশর আলু অন্যতম। কেশোর আলুতে অনেক ধরনের খনিজ পদার্থ রয়েছে যা আপনার শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে শরীর সুস্থ থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কেশর আলু
আমরা এতক্ষণ বুঝেছি যে কেশর আলুতে অনেক ধরনের উপকারী উপাদান এবং শক্তির উৎস রয়েছে যা আমাদের শরীর ভালো রাখতে খুবই সাহায্য করে। আমরা প্রথমে জেনেছি যে কেশর আলুতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেশি। আর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধে চমৎকার সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কেশর আলু খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীর ভালো বৃদ্ধি পাবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে কেশর আলু
কেশর আলু তে আছে প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজ যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। ব্লাড সুগারের পরিমাণ কে নিয়ন্ত্রন করে। ডায়াবেটিস রোগীর ডায়াবেটিসের পরিমাণ বেড়ে গেলে অবশ্যই চিন্তা না করে বেশি করে কেশর আলু খাওালে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে। তাই ডায়াবেটিস রোগীকে কেশর আলু খাওয়ানো জরুরি।
মস্তিস্কের সমস্যা সমাধানে কেশর আলু
কেশর আলুতে ভিটামিন বি-৬ আছে। যা বেশিরভাগ ফল বা সবজি তে পাওয়া যাই না। এই ভিটামিন বি-৬ মস্তিস্কের নার্ভ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া আরও অনেক সমস্যা সমাধানেও সমান উপকার করে থাকে।
মনের সুস্থতায় কেশর আলু
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ঘাটতি পূরণে কেশর আলু
শরীরের সেল ড্যামেজ রোধের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেশর আলুতে ভিটামিন ই, সেলোনিয়াম, ক্যারোটি থাকে। এছাড়া এক কাপ কেশর আলুতে প্রতিদিন চাহিদা সম্পন্ন অর্ধেক ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এসব উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এভাবেই ড্যামেজ প্রতিরক্ষায় ফ্রি রেডিকেল তৈরি করতে বাধা দেয়। আর ফ্রি রেডিকেল শরীরের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার জন্য দায়ী।
গাটের ব্যাকটেরিয়ার জন্য কেশর আলু
কেশর আলুতে প্রিবায়োটিক ফাইবার থাকে যা ১ ধরনের ইনুলিন। প্রিবায়োটিক আমাদের পাকস্থলীর গাটে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার খাবার। প্রিবায়োটিক না থাকলে পাকস্থলীর উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকবে না। ব্যাকটেরিয়া না থাকলে হজমে সমস্যা হয়। প্রিয়বায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ওজন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে কেশর আলুর ব্যবহার
কেশর আলুতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে। পুষ্টিকর সম্পন্ন হওয়ার কারণে এবং মিষ্টি কম হওয়ার জন্য এটি বেশি পরিমাণে খেলেও ওজন বারবে না। এর সবচেয়ে উপকারী দিয়ে হচ্ছে প্রচুর জলীয় পদার্থ থাকায় এবং ফাইবার থাকার কারণে ক্ষুধা কমে যায়।
আরও পড়ুনঃ ১৫ দিনে চিকন হওয়ার ২০ টি সহজ ও স্বাস্থ্যকর উপায়
ইনসুলিনের পরিমাণ কম থাকায় ওজন বাড়ে না। পরীক্ষাটি ইঁদুরের উপর গবেষণা করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে কেশর আলু শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। প্রিবায়োটিক ফাইবারের কারণে ওজন কমে যায়। হরমোনাল ব্যালেন্স হয়।
গর্ভবতীদের জন্য কেশর আলু
কেশর আলুতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন উপাদান। তাই গর্ভাবস্থায় যদি আপনি কেশর আলু খান তবে আপনার সব ধরনের পুষ্টি উপাদান সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। আর এই উপাদানগুলো শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন দিয়ে থাকে। যা শিশুর মস্তিষ্ক এবং হাড়ের গঠনে সাহায্য করে।
আলসারের সমস্যার সমাধানে কেশর আলু
অনেকেই আলসারের সমস্যায় কাতর থাকেন। আলসারের সমস্যা হলে কেশর আলু খাওয়া যেতে পারে। আজহারের সমস্যা দূর করার জন্য কেশর আলু খুবই উপকারী। কারণ প্রদাহ জনিত সমস্যা সমাধান করে শরীর ভালো রাখে।
তাই আপনারা সকলে নিয়মিত কেশর আলু খাবেন। আর আপনা বুঝতেই পারছেন কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা কতটা ব্যাপক। যা শুধুমাত্র কয়েকটা উপকারিতা দিয়েই শেষ করা যাবে না। তাই আমাদের সকলেরই উচিত কম খরচে এবং সুলভ মূল্যে এত ভালো একটা দেশি খাবার খেলে যদি আমাদের এত উপকার হয় তবে অবশ্যই নিয়মিত এটা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
কেশর আলু খাওয়ার অপকারিতা
কেশর আলো খুবই উপকারী এবং সুস্বাদু একটি সবজি। তবে এটি খেতে ফলের মতোই সুস্বাদু। সাধারণত শীতকালে এই ফলটি বেশি পাওয়া যায়। তবে এই ফলের উপকার যেমন আছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। কারণ অতিরিক্ত কেশর আলু খেয়ে ফেললে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
- যেহেতু কেশর আলুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি এবং প্রোটিন রয়েছে তাই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে শরীরের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে কেশর আলু খেলে আপনি পরিপূর্ণ উপকার পেয়ে যাবেন। নিচে কেশর আলুর সাতটি অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- অতিরিক্ত কেশর আলো খেলে হার্টের সমস্যা হয়। আমরা আগে জেনেছি টিকেশনাল ও খাওয়ার জন্য হার্টের সমস্যার সমাধানও ঘটে। কিন্তু অতিরিক্ত প্রেসার আলু খাওয়া মোটেও ঠিক নয়। যার কারণে হার্টের সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
- যেহেতু কেশর আলু একটি ঠান্ডা জাতীয় আলু। এবং একে ঠান্ডা আলু বলা হয়। যার কারণে অতিরিক্ত এই আলু খেলে শরীর বেশি ঠান্ডা হয়ে যায় এবং ঠান্ডা জাতীয় সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
- কিডনির সমস্যা কেশর আলুতে সমাধান হওয়ার কথা। কারণ এ আলুতে অনেক পরিমাণে পানি থাকে। শরীরের পানি স্বল্পতা সমাধান করতে সাহায্য করে। কিন্তু বেশি আলু খাওয়ার কারণে কিডনির সমস্যা হয়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণ কেশর আলু খেলে আয়রন ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামের শোষণ কম হয়।
- কেশর আলু খাওয়ার সময় অবশ্যই ভালো করে পরিষ্কার করে খেতে হবে। কারণ এর উপরের স্তরে ক্ষতিকারক রোটেনন থাকে। যা শরীরের জন্য অপকারী। কেশর আলুর মূল ছাড়া অন্য কোন অংশই খাওয়া যায় না। কারণ অন্য অংশগুলোতে রোটেনন নামক বিষাক্ত উপাদান রয়েছে।
- যেসব মাটিতে কেশর আলু জন্মায় সেই মাটি যদি টক্সিক হয় কোন ক্ষতিকারক কেমিক্যাল থাকে বা হ্যাপি মেটাল থাকে তবে ওই মাটিতে জন্ম নেওয়া কেশর আলু খাওয়া যাবেনা।
- অনেকের কেশর আলোতে এলার্জি থাকতে পারে তাই খাওয়ার আগে অবশ্যই ডক্টরের পরামর্শ নিতে হবে যে এলার্জি সমস্যা থাকা রোগীদের এই আলু খাওয়া যাবে কিনা। কারণ এলার্জির সমস্যা থাকলে এই সবজি খেলে মুখ জিব্বা বা শরীর লাল হয়ে যেতে পারে। চুলকানি শুরু হতে পারে।
কেশর আলু বেশি খেয়ে ফেললে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই আলু খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। কেশর আলু পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হলেও খাওয়ার পরিমাণ এর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।যে কোন খাবারে পরিমাণমতো না খেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
কেশর আলুর পুষ্টিগুণ
কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কারণ কেশর আলুতে রয়েছে উপকারি অনেক পুষ্টি উপাদান। কেশর আলু পুষ্টি উপাদানের ভরপুর একটি সবজি। অনেক ধরনের খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন রয়েছে। কিন্তু প্রোটিন ও ফ্যাট কম। এক কাপ কেশর আলুতে কি কি ধরনের উপকারী উপাদান থাকে তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- ক্যালোরিঃ ৪৯ কিলো ক্যালরি
- প্রোটিনঃ ১ গ্রাম
- কার্বসঃ ১২ গ্রাম
- ফ্যাটঃ ০.১ গ্রাম
- ভিটামিন সিঃ ৪৪%
- ফলেটঃ ৪% আরডিআই
- ফাইবারঃ ৬.৪ গ্রাম
- আয়রনঃ ৪% আরডিআই
- ম্যাগনেসিয়ামঃ ৪% আরডিআই
- ম্যাঙ্গানিজঃ ৪% আরডিআই
এছাড়াও কেশর আলুতে আরো সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ই, থায়ামিন, ভিটামিন বি সিক্স, ফসফরাস, কপার ও জিংক থাকে। শাখ আলুতে ছেলেদের জন্য ফাইবারের পরিমাণ ১৭ %ও মেয়েদের জন্য ২৩% রয়েছে। কেশর আলুতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন পানিতে দ্রবীভূত হওয়ার কারণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের বিভিন্ন রিয়াকশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ঠান্ডা আলুর পরিচিতি
কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলেও কেশর আলু সম্পর্কিত পরিচয় আমরা অনেকেই জানিনা। কেশর আলু সাধারণত ঠান্ডা আলু পরিচিত। সাধারণত একে জুড়ো আলুও বলা হয়। ঠান্ডা আলু হওয়ার কারণে কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। আবার পাহাড়ি রা এই সবজিকে রান্না করেও খায়। শাখ আলু বা কেশর আলু একপ্রকার মূল।
এই আলু কাঁচাও খাওয়া যায় অথবা সবজি হিসেবেও খাওয়া যায়। ৫ থেকে ৬ প্রজাতির শাখ আলু পাওয়া যায় বাংলাদেশে। এই গাছ ছয় মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এবং এর মূল একটি বাদামি খোলস দ্বারা আবৃত। এবং ভিতরে শালগম এর মত সবজি রয়েছে যেটি আমরা সবাই খেতে পারি।
একটি গাছে দুটি বা তিনটি আলু হয়। খোসা ছাড়িয়ে সহজেই রান্না করে খাওয়া যায় অথবা কাঁচা খাওয়া। শাখ আলু প্রথম দেখা যায় দক্ষিণ আমেরিকা। কিন্তু এটা সারা পৃথিবীতেই জন্মাতে পারে। সাধারণত বালি মাটিতে অথবা সাগর পাড়ে সমতলে এটি বেশি জন্মায়।
কেশর আলুর উৎপাদন খরচ
বাংলাদেশের নিচু অঞ্চলে অথবা চরাঞ্চলে নদীর পাড়ে এ আলুগুলো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়। অনেক এলাকার মানুষই কেশর আলু উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। স্থানীয় হাটে কেশর আলু মন প্রতি বিক্রি হয় ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে। এবং খুচরা প্রতি কেজি কেশর আলুর দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার ও জাফরান ক্রিমের উপকারিতা
সাধারণত বালুতে এই আলুর চাষ বেশি ভালো হয়। দিনে দিনে আলুর চাষ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বিঘা ৫০ থেকে ৬০ মন কেশর আলু পাওয়া যায়। এবং প্রতি বিঘায় ২০ হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে। এবং বিঘা প্রতি কেশর আলু বিক্রি হয় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা। যা উৎপাদন খরচের দ্বিগুণ।
কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন
কেশর আলু কি সবজি?
হ্যাঁ কেশর আলু এক ধরনের মূল জাতীয় সবজি বা ফল ও বলা যায়।
কেশর আলু খেলে কি কোন উপকার আছে?
কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা উপরে আলোচনা করেছি। কেশর আলু খুবই উপকারী এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার।
অতিরিক্ত কেশর আলু খেলে কি কোন সমস্যা হয়?
কিশোর আলু অনেক পুষ্টিগণ সম্পন্ন একটি খাবার হলেও অতিরিক্ত কেশর আলু খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী নয়।
বাংলাদেশে কি কেশর আলু উৎপাদন হয়?
হ্যাঁ বাংলাদেশে বেশ কিছু এলাকায় কেশর আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। চরাঞ্চলে অথবা পাহাড়ি এলাকায় এর উৎপাদন দেখা দেয়।
কেশর আলু চাষ পদ্ধতি
কেশর আলুর চাষ পদ্ধতি মোটামুটি সহজ। তেমন একটি কষ্টসাধ্য নয়। এর মৌসুম ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। সাধারণত বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের বেশি জন্মায়। পাহাড়ীরা জুমে এই আলু চাষ করে থাকে। সাধারণত জুমে যখন ধান চাষ করা হয় তখন এই আলুর বীজ বপন করে।
ধান উঠে গেল আলুগুলো জুমে থেকে যায়। আর আলু বড় হয়ে গেলে মাটি ফেটে যায়। এ সময়ই আলু সংগ্রহ করতে হয়। পার্বত্য তিনটি জেলা কক্সবাজার ময়মনসিং ও সিলেটে ঠান্ডা হলে বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীর আরে এলাকা বা চড় এলাকায় এই আলুর চাষ করা হয়ে থাকে।
মিষ্টি আলু খাওয়ার উপকারিতা
কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা আলোচনা করলাম। আলুর ঐ আরেকটি জাত মিষ্টি আলু এর অনেক ধরনের উপকারী গুণ রয়েছে। মিষ্টি আলু প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং ফাইবার হয় থাকার কারণে এর উপকারিতা ও কেশর আলুর মতোই বেশি। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন থাকার কারণে এসব ক্যারোটিন গুলো ভিটামিনের রূপান্তরিত হয়। যা চোখের উপকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ডি থাকার কারণে এবং পটাশিয়ামও রয়েছে তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং হার্ট ভালো রাখতে খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে।
- শরীরের অতিরিক্ত চর্বি বা ব্লাড সুগার কমাতে মিষ্টি আলুর উপকারিতা ব্যাপক।
- যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে, সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মিষ্টি আলু খেতে পারেন।
- মিষ্টি আলুতে থাকা ফাইবার ও ক্যালরি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- যারা ডাইবেটিসের সমস্যায় ভোগেন তারা মিষ্টি আলু খেলে ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকে।
- মস্তিষ্কের উন্নতির জন্য মিষ্টি আলু অনেক কার্যকর।
- পাকস্থলীর সমস্যা দূর করতে মিষ্টি আলু খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত আলু খেলে শারীরিক সমস্যা
কেশর আলুর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকে অবগত হয়েছি। তেমনি সাধারণ আলু খাওয়ারও অনেক ধরনের অপকারিতা রয়েছে। আলু আমাদের সকলেরই অনেক পছন্দের একটি খাবার। আমার সব ধরনের তরকারিতেই কম বেশি আলু নিয়ে থাকি। তাই চলুন জেনে নেই আলু খেলে কি ধরনের অপকারিতার সম্মুখীন হতে হয়।
- সাধারণ আলুতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণ আলু খেলে শরীরে ক্যালরি পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ওজন বেড়ে যাবে।
- অতিরিক্ত আলু ডায়াবেটিক হওয়ার কারণ।
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য অতিরিক্ত আলু খাওয়া দায়ী।
- অতিরিক্ত আলু খেলে ডায়রিয়া ও হতে পারে।
- জন্ডিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে খুব বেশি আলু গ্রহণ করলে।
রূপচর্চায় আলুর ব্যবহার
কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা আছে কিন্তু এর রূপচর্চা উপকারিতা তেমন নেই। তবে সাধারণ আলুর সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি অবগত। সবজি হিসেবে তরকারিতে যেমন আমরা খাই তেমনি রূপচর্চায়ও এর উপকার অনেক।
- ত্বকের কালো দাগ দূর করার জন্য আলু সবচেয়ে উপকারী। ফ্রিজের ঠান্ডা আলু ভালো করে বেটে এর সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগালে এবং দশ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে মুখের ত্বক পরিষ্কার হবে এবং নিয়মিত ব্যবহার করলে কালো দাগ দূর হবে।
- ঠান্ডা আলু ভালো করে ব্লেন্ডারে মিহি করে এর সাথে এক চা চামচ মধু ও দুই চা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে ভালো করে মুখে ত্বকে লাগাতে হবে এবং ১৫ মিনিট পর সাধারণ পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি নিয়মিত করলে মুখে ত্বক উজ্জ্বল হবে।
- চুলের ময়শ্চারাইজার এর জন্য আলুর রস খুবই উপকারী।
- চুলে ত্বকে মজবুত করতে, চুলকে ঘন করতে আলুর রস বহুল ব্যবহৃত হয়।
- ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করার জন্য আলুর রস খুবই উপকারী।
কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ক আরো কিছু প্রশ্ন
কেশর আলু আর সাধারন আলু কি একই?
না কেশর আলু এক ধরনের আলু হলেও এটা সাধারণ আলুর মত নয়। সাধারণ আলুতে কেশর আলুর মতো এত উপকারী উপাদান নেই।
রূপচর্চার জন্য কেশর আলুর ব্যবহার রয়েছে?
রূপচর্চার জন্য কেশর আলুর তেমন কোন ব্যবহার নেই। তবে পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে কেশর আলু খেলে অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
কেশর আলুর এত উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও অপকারি কেন?
কেশর আলু অতিরিক্ত খেলে শরীরের জন্য অনেক ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তাই পরিমিত পরিমাণে কেশর আলু খাওয়া প্রয়োজন।
কেশর আলু খাওয়ার ১৬ টি উপকারিতা ও ৭ টি অপকারিতা বিষয়ে লেখকের মন্তব্য
আজকে কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেক ধরনের তথ্য জানতে পারলাম। কেশর আলু একটি শীতকালীন সবজি এবং এটি খুব কম সময়ের জন্যই পাওয়া যায়। আর অনেক ধরনের পুষ্টি এবং খনিজ পদার্থ থাকার কারণে এটি খেলে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। তাই অবশ্যই সুযোগ পেলে এবং সামনের দেখলে কেনা জরুরী।
তবে কেশর আলু খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে। এ বিষয়ে অবশ্যই আমাদের সাবধান থাকা জরুরী। কারণ অতিরিক্ত কেশর আলু খেলে শরীরের অতিরিক্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ অতিরিক্ত পুষ্টি এবং ভিটামিন শরীরের জন্য ক্ষতি সাধন করে। তাই অবশ্যই পরিমাপ অনুযায়ী কেশর আলু খাওয়া জরুরী।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url