রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার ও জাফরান ক্রিমের উপকারিতা
রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সবাই জানতে আগ্রহী। কারণ জাফরান অতি মূল্যবান একটি উপাদান হওয়ার কারণে এ ব্যবহার সম্পর্কে সবাই সচেতন। জাফরান ক্রিমের উপকারিতা রূপচর্চার ক্ষেত্রে অবর্ণনীয়।
আমরা আজকের আর্টিকেলে জাফরান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারবিধি এবং এর কত ধরনের উপকার রয়েছে এমনকি জাফরানের ব্যবহারে কি ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় এবং কারা কিভাবে খেতে পারবে এসব বিষয়ে আজকে আলোচনা করব।
পেজ সূচিপত্রঃ রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার ও জাফরান ক্রিমের উপকারিতা
- রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার
- জাফরান ক্রিমের উপকারিতা
- জাফরানের উপকারী উপাদান ও উৎপত্তিস্থল
- জাফরানের বাজার মূল্য
- রোগ প্রতিরোধে জাফরানের উপকারিতা
- দুধ ও জাফরানের ব্যবহার
- রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন
- জাফরান তেল তৈরীর পদ্ধতি
- জাফরান তেল এর ব্যবহার বিধি
- গর্ভকালীন সময়ের সুরক্ষার্থে জাফরান এর ব্যবহার
- বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জাফরান ব্যবহারের নিয়ম
- জাফরান বিষয়ে সাবধানতা
- জাফরান বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্ন
- রূপচর্চায় জাফরান এর ব্যবহার বিষয়ে লেখক এর মন্তব্য
রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার
রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার বহুল প্রচলিত ও সমাদৃত। জাফরান একটি খুবই উপকারী মসলা। জাফরানের ব্যবহার সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এটা খাবারে বা রূপচর্চায় এমনকি ওষুধ হিসেবেও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে খুবই সাহায্য করে। আমরা আজকে জাফরানের সব ধরনের ব্যবহার সম্পর্কে জানব। রূপচর্চার জন্য জাফরানের ব্যবহার বিধি নিচে আলোচনা করা হলো।
জাফরান ও চন্দনের ব্যবহার
রূপচর্চার জন্য চন্দন খুবই উপকারী এর সাথে গোলাপ জল এর ব্যবহার তুলনাহীন। মুখে ত্বকের জন্য এই উপাদান গুলোর সমন্বয়ে একটি সুন্দর ফেসপ্যাক বানানো সম্ভব।
এক চামচ চন্দন পাউডার এর সাথে পাঁচ থেকে ছয়টি জাফরান এর গুড়া মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর গোলাপজল দিয়ে সুন্দর একটা ঘন পেস্ট বানাতে হবে। এবং এই পেস্টটি যদি ১৫ মিনিট আপনি মুখে রেখে দেন এবং পরে হালকা গরম পানি নিয়ে ধুয়ে ফেলেন তবে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
জাফরান ও ব্রাউন সুগার এর ব্যবহার
জাফরান ও ব্রাউন সুগার ব্যবহার করে ত্বকের কালচে ভাব যেসব জায়গায় বিদ্যমান সেসব জায়গাগুলোতে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে জাফরান এর গুড়ার সাথে ব্রাউন সুগার মিশিয়ে তাতে নারিকেল তেল দিয়ে ভালো করে পেস্ট বানাতে হবে। এরপর এই পেস্টটি নির্ধারিত জায়গায় লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত রাখতে হবে। এরপর ধুয়ে ফেলতে হবে।
জাফরান ও গোলাপ জলের ব্যবহার
ত্বকের উপকারী টোনার তৈরি করার জন্য জাফরান ও গোলাপ জলের ব্যবহার খুবই প্রচলিত। এই মিশ্রণের অনেক টোনার বাজারে হর হামেশা বিক্রি করা হয়। কিন্তু যদি আপনি সেটা নিজে বানিয়ে ফেলতে পারেন তবে আপনার কষ্ট করে কেনার প্রয়োজন পড়বে না। রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই মিশ্রণটি মুখে নিয়মিত স্প্রে করবেন। এতে মুখের ত্বক সুন্দর এবং সতেজ থাকে।
জাফরান ও বাদাম তেলের ব্যবহার
বাদামের তেলে যদি জাফরান ভিজিয়ে রাখা যায় এবং সেটা যদি রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করা যায় তবে সেটা মশ্চারাইজার হিসেবে খুব ভালোভাবে কাজ করে।
জাফরান ও কাঁচা দুধের ব্যবহার
জাফরান ও কাঁচা দুধ একটি খুবই ভালো মিশ্রণ রূপচর্চার ক্ষেত্রে। কাঁচা দুধে জাফরান কিছুক্ষণ মিশিয়ে রেখে তা যদি পরবর্তীতে মুখে একটু একটু করে ব্যবহার করা যায় তবে মুখের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুনঃ হিমালয়া নিম ফেসওয়াশ এর উপকারিতা
জাফরান, চন্দন ও দুধের মিশ্রণ এর ব্যবহার
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য জাফরানের সাথে চন্দন ও দুধের মিশ্রণের তুলনা নেই। দুই চিমটি জাফরান দিয়ে যদি সেটা ঘন দুধের সাথে মিশিয়ে রাখা হয় এক ঘন্টার জন্য এবং এরপর এক টেবিল চামচ চন্দন গুড়া দিলে যে মিশ্রণটি তৈরি হবে সেটি মুখে এবং শরীরের কালো জায়গা গুলোতে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
জাফরান, লেবু ও দুধের ব্যবহার
ত্বকের রোদে পোড়া ভাব কমানোর জন্য জাফরান লেবু ও দুধের মিশ্রনটি ব্যবহার করলে অভুতোপূর্বক উপকার পাওয়া যাবে।
এক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ছয় টেবিল চামচ গরম দুধের সাথে এক টেবিল চামচ লেবু মিশিয়ে প্রথমে ফেটিয়ে নিতে হবে। এরপর ফেটানো হয়ে গেলে ওই মিশ্রণে এক চিমটি জাফরানের গুড়া দিতে হবে। এবং গরম থাকা অবস্থায় এটি ব্যবহার করতে হবে।
জাফরান ও পুদিনা পাতার ব্যবহার
ব্রণ দূর করার জন্য জাফরানের ব্যবহার এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। ব্রণের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে জাফরান এক টেবিল চামচ গোলাপ জল দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর একমুঠো পুদিনা পাতা বেটে জাফরান এর জলে মিশিয়ে নিতে হবে। এবং এই মিশ্রণটি আধা ঘন্টা মুখে দিয়ে রাখতে হবে।
জাফরান ও মধুর ব্যবহার
ত্বকের রুক্ষতা দূর করার জন্য মধুর তুলনা নেই। মধু যেমন খাওয়ার ক্ষেত্রে উপকারী তেমনি রূপচর্চার জন্য বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়। এক টেবিল চামচ মধু ২ চিমটি জাফরানের সাথে প্রথমে মিশিয়ে নিতে হবে মিশ্রনটি ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে এরপর সেই মিশ্রণটি ত্বকে সুন্দরভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর ১০ মিনিট হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলবেন।
জাফরান, অলিভ অয়েল ও টক দই এর ব্যবহার
যাদের ত্বক রুক্ষ তারা এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন। এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এর সাথে এক চিমটি জাফরান এবং টক দই মিশিয়ে রাতের বেলা ভালো করে মেখে ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন। আবার গুড়া দুধের সাথে জাফরান এবং গোলাপজল মিশিয়ে একটি সুন্দর প্যাক বানিয়ে ফেলা যায়।
জাফরান সাবান এর ব্যবহার
জাফরান দিয়ে সাবান ও তৈরি হয় হাতের তৈরি জাফরানের সাবান ব্যবহার করে বেশ অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে, দাগ ছোপ কমাতে সাহায্য করে এমনকি ত্বককে মসৃণ করে।
জাফরান তেলের ব্যবহার
জাফরানের তেল ব্যবহার করলে মুখের সব ধরনের দাগ বা ডার্ক স্পট চলে যায়। এমনকি মুখ উজ্জ্বল হয়। রাতে ঘুমানোর আগে জাফরান তেল মুখে ব্যবহার করতে হবে এবং কালে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
- ত্বকের বয়সের ছাপ বা বলি রেখা দূর করার জন্য জাফরানের জুড়ি মেলা ভার। বিশেষ করে বার্ধক্য দূর করতে এর প্রচুর ব্যবহার হয়। এজন্য টক দই ও মধুর সাথে জাফরান মিশিয়ে মুখে নিয়মিত ব্যবহার করলে বার্ধক্য জনিত দাগ ছোপ বা বলি রেখা দূর হয়ে যাবে।
- নিয়মিত জাফরান ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকে পিগমেন্টেশন দূর হবে। জাফরানে ক্রোসেটিন বা ক্রোসিং নামক যৌগ থাকে যা পিগমেন্টেশন এর সমস্যা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- চোখের নিচের ফোলা ভাব দূর করতেও জাফরান ব্যবহার হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে জাফরান যেমন খাবারে ব্যবহারের জন্য খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পায় এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় তেমনি রূপচর্চায় জাফরান এর ব্যবহার রূপের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। জাফরান একটি ভালো এন্টিবায়োটিক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তবে যুগ যুগ ধরে রূপচর্চার ক্ষেত্রে জাফরানের ব্যবহারই বেশি জনপ্রিয়।
জাফরান ক্রিমের উপকারিতা
রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার যেহেতু সর্বোপরি তাই জাফরান ক্রিমের উপকারিতা এবং জনপ্রিয়তা কোনটারই কমতি নেই। যেহেতু জাফরান ক্রিমে রয়েছে ক্ষতিকারক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে মুক্তির উপায় এছাড়াও এই ক্রিম যেহেতু ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে তাই জাফরান ক্রিম এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।
জাফরান বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলাগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম। যেহেতু দামি তাই সহজে রান্নায় ব্যবহার না করা হলেও রূপচর্চার ক্ষেত্রে বেশি প্রচলিত। স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য বিউটি প্রোডাক্ট হিসেবে জাফরানের বহুল ব্যবহার রয়েছে। তবে জাফরান নাইট ক্রিম রূপচর্চার ক্ষেত্রে খুবই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাজারে অনেক ধরনের জাফরান নাইট ক্রিম পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ মেলাট্রিন ক্রিম কতদিন ব্যবহার করতে হবে
কিন্তু সেগুলা কতটা উপকারী এবং রাসায়নিক উপাদানে পূর্ণ কিনা সে ব্যাপারে আমাদের ধারণা থাকেনা। তাই যদি ঘরে বসেই এই ক্রিম তৈরি করে ফেলা যায় তবে আপনার অর্থ এবং অথেন্টিসিটি দুটি সমস্যা থেকেই মুক্তি পাবেন। নিচে জাফরান ক্রিম তৈরি করার প্রক্রিয়া দেখানো হলো।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- ২ চামচ এলোভেরা জেল
- ২০ টি জাফরান
- ১ চামচ বাদাম তেল
- ২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল
- ১ চামচ গোলাপ জল
তৈরি প্রক্রিয়া
প্রথমে জাফরানগুলো পেপারে মুড়িয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। এরপর এই টিস্যু পেপার টি একটি খালি তাওয়ায় গরম করতে হবে। গরম করা হয়ে গেলে টিস্যু পেপারটি খুলে জাফরান বের করে নিতে হবে। এরপর এই জাফরান টি এলোভেরার সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এবং আস্তে আস্তে বাকি সব উপকরণ মিশাতে হবে। এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে জাফরান নাইট ক্রিম।
রাতে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে ঘুমানোর আগে অবশ্যই এই ক্রিমটা মেখে নিতে হবে। এরপর সকাল বেলা ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
জাফরান নাইট ক্রিম এর উপকারিতা
ডার্ক সার্কেল দূর হয়ঃ আমাদের অনেকেরই অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের জন্য রাতে না ঘুমানোর জন্য আমাদের চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়। এই দাগ পরে উঠাতে খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু এই নাইট ক্রিমটি ব্যবহার করলে খুব সহজেই কালো দাগ দূর করা যায়।
মুখের দাগ দূর করার জন্যঃ মুখে আমাদের অনেক সময় ব্রণের দাগ পড়ে যায়। যা সহজে উঠানো যায় না। নাইট ক্রিম ব্যবহার করলে এই দাগ ও উঠে যাবে।
ব্রণ সারাতে নাইট টিমের ব্যবহারঃ আমাদের অনেকের মুখে একটিভ ব্রণ রয়েছে। যা কখনোই বন্ধ হয় না। এই ব্রন গুলো সারানোর জন্য নাইট ক্রিমের ব্যবহার খুবই উপযোগী।
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ব্যবহারঃ জাফরানের অবস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে এই ক্রিমটি আপনি নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
মুখের ট্যান ভাব দূর করার উপায়ঃ জাফরান নাইট ক্রিম ব্যবহার করলে মুখের ট্যান ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ এই ক্রিমে রয়েছে ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মির থেকে বাঁচার উপায়। আর এ কারণে এই ক্রিমটি ট্যান দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
জাফরানের উপকারী উপাদান ও উৎপত্তিস্থল
ক্রোকাস স্যাটিভাস বৈজ্ঞানিক নাম সমৃদ্ধ জাফরান একটি ফুল থেকে মূলত পাওয়া যায়। জাফরানের চাষ অতি প্রাচীন। ৩৫০০ বছর আগে থেকে এর চাষ করে আসা হচ্ছে। মোটামুটি ৯০ টিরও বেশি রোগের সমাধান জাফরান থেকে পাওয়া যায়। অনেক সমস্যার সমাধান জাফরানের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কারণ জাফরানে রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা মানুষের শারীরিক উন্নতির জন্য খুবই কার্যকর।
জাফরানে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, এন্টিফাঙ্গাল এজেন্ট ও এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ভিটামিন সি রয়েছে যা ইনফেকশন দূর করে। জাফরানে রয়েছে অ্যান্টিটাসিব এজেন্ট যা টক্সিটেশন দূর করে সেনসিটিভিটি সরিয়ে দেয়। এছাড়া এই উপাদানটি দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
জাফরান অনেক আগে ইরানে পাওয়া যেত। তবে পুরনো নথি থেকে দেখা যায় যে অনেক পূর্বে মেসোপটেমিয়া বা মিশরে জাফরানের ব্যবহার খুবই প্রচলিত ছিল। তবে বর্তমানে জম্মু এবং কাশ্মীরে এর ব্যবহার অতি ব্যাপক। এর জন্য যে ধরনের আবহাওয়া দরকার সেই আবহাওয়া বাংলাদেশে নেই। শীত শীত স্যাতস্যেতে পরিবেশ জাফরানের গাছ হওয়ার জন্য বেশ উপযোগী।
জাফরানের বাজার মূল্য
রূপচর্চায় জাফরান এর ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। বর্তমানে জাফরানের আমদানি বাংলাদেশে খুব ভালোভাবেই হচ্ছে। জাফরান দেখতে সুন্দর সাথে এর কার্যকারিতাও ব্যাপক। অনেক আগে থেকেই জাফরানের ব্যবহার হয়ে আসছে। খাবারে ব্যবহার হতো আগেকার রাজা-বাদশাদের আমলে। পুরো বিশ্বে এই মসলাটির নাম লাল স্বর্ণ বলা হয়।
কারণ এর দাম প্রচুর। আর দামি হওয়ার কারণে সবাই সবকিছুতে এই মশলাটি ব্যবহার করতে পারে না। তবে অল্প একটু ব্যবহার করলেও এই মসলা থেকে অনেক উপকার পাওয়া যায়। মূলত এই জাফরান টি পাওয়া যায় একটি ফুলের পাপড়ির ভেতর থেকে। সাধারণত ফুলগুলি বেগুনি রংয়ের হয়ে থাকে এবং আমরা যেটাকে জাফরান হিসেবে বলে থাকি সেই পরাগদণ্ড গুলো লাল বর্ণের হয়ে থাকে।
জাফরান অনেক মূল্যবান হওয়ার কারণ জাফরানের ফুল প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার প্রয়োজন হয় মাত্র ১ কিলোগ্রাম জাফরান মসলা তৈরি করার জন্য। আর এ ফুল তুলতে সময় লাগে প্রায় ৪০ ঘন্টা। তাই ১ কিলোগ্রাম জাফরানের দাম পড়ে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা।
এছাড়াও ফুল সংগ্রহ করারও একটি নির্দিষ্ট টাইম রয়েছে। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এই ফুল সংগ্রহ করতে হয়। তা না হলে ফুল নষ্ট হয়ে যায়। মূলত সব ধরনের প্রক্রিয়া অনেক সময় সাপেক্ষ হওয়ার কারণে এর দামটা একটু বেশি। পৃথিবীতে মোট জাফরান উৎপাদনের মধ্যে ইরান থেকেই ৮০% জাফরান বাজারজাত করা হয়।
রোগ প্রতিরোধে জাফরানের উপকারিতা
রূপচর্চায় জাফরান এর ব্যবহার ছাড়াও জাফরান যেহেতু একটি ভেষজ উদ্ভিদ তাই এটি
আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারে আসে। জাফরান একটি মসলা এবং এর নিজস্ব গন্ধ
এবং রং রয়েছে। পরিমিত পরিমাণে এবং খুব কম পরিমাণে খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে যেকোনো
ধরনের রোগ প্রতিরোধের জন্য।
বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন মিনারেল বা খনিজ
পদার্থ থাকার কারণে জাফরানের যে স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তা নিচে আলোচনা করা
হলো।
- জাফরান খেলে মানুষের শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। তাই মস্তিষ্কের বৃদ্ধিতে খুবই উপকার পাওয়া যায়। দেখা গেছে যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল তারা জাফরান খেলে স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়।
- যেহেতু এটি হরমোন উত্তেজনা বৃদ্ধি করে। তাই শরীরের পুষ্টি বাড়াতে এবং সুস্থতা দান করতে সাহায্য করে।
- জাফরানে যেহেতু অনেক আয়রন রয়েছে তাই রক্ত পরিষ্কার করতে এবং তৈরি করতে সাহায্য করে।
- যাদের রাত জাগার অভ্যাস এবং ঘুম হয় না তারা অনিদ্রা দূর করার জন্য জাফরান রাতের বেলা দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো ঘুম হয়।
- শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা খুবই কষ্টকর একটি রোগ। জাফরান খেলে এই শ্বাসকষ্ট ছাড়াও ঠান্ডা জাতীয় সমস্যা এমনকি এজমা দূর হয়।
- যাদের হজমে সমস্যা হয় তাদের পেটের সমস্যা সাড়াতে জাফরান খুবই সাহায্য করে।
- মাসিকের ব্যথা জনিত সমস্যায় যারা খুবই কষ্টে আছেন তাদের জন্য জাফরান একটি ভালো সমাধান।
- হৃদরোগের সমস্যা বা কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জাফরান কার্যকর। কারণ এটাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম যা হার্ট ভালো রাখে।
- বর্তমানে ক্যান্সার এর ওষুধ পাওয়া দায়। যেহেতু এটি একটি ক্ষতিকারক ভাইরাস এবং ক্যান্সারের কোন ওষুধ নেই তবে ক্যান্সারের চিকিৎসাতেও জাফরানের ভূমিকা রয়েছে।
- জাফরান মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে বদরাজি মানুষদের রাগ কমে যায়।
- জাফরান যৌন উত্তেজনা ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
- জাফরান এ যেহেতু অ্যান্টিসেপ্টিক জাতীয় পদার্থ রয়েছে তাই ক্ষত সাড়াতে সাহায্য করে।
- জাফরান খাওয়ার ফলে যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সমস্যায় ভুগছেন তাদের ওজন নিয়ন্ত্রিত হয়।
- জাফরানের রয়েছে ক্রসিন যা জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
- দাঁতের কোন সমস্যা হলে সমস্যা জনিত জায়গায় একটু জাফরান লাগিয়ে রেখে দিলে সমস্যার সমাধান হয়।
এছাড়াও আমরা যদি প্রত্যেকেই এক গ্লাস দুধের সাথে প্রতিদিন এক চিমটি জাফরান মিশিয়ে খেতে পারি তবে অবশ্যই অনেক ধরনের অচেনা রোগ থেকে আমরা মুক্তি পাবো।
এক গ্লাস জাফরান মিশ্রিত দুধ অবশ্যই আপনি পারলে আপনার বাচ্চাকে খাওয়াবেন। এতে বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশে খুবই সাহায্য করে। এমনকি আমরা জেনে গিয়েছি যে এটি ত্বক এছাড়া চুলেরও উপকার করে। তাই সুযোগ থাকলে নিয়মিত জাফরান খাওয়ার অভ্যাস করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
দুধ ও জাফরানের ব্যবহার
রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার সম্পর্কে জানলেও রূপচর্চা অথবা স্বাস্থ্যের জন্য দুধ এবং জাফরানের মিশ্রণ কতটা উপযোগী বা উপকারী আমরা এখনো তো আর জানি না। তাই আমরা নিচে এখন আলোচনা করব রূপচর্চার ক্ষেত্রে অথবা স্বাস্থ্যের উপকারের জন্য দুধ ও জাফরানের ব্যবহার কতটা জরুরি।
রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার
রূপচর্চার ক্ষেত্রে জাফরানের জন্য প্রথমে আমাদের জানা লাগবে তৈরির প্রক্রিয়া। এ কারণে প্রথমেই ২ চা চামচ দুধ নিতে হবে এবং এর সাথে ১ চিমটি জাফরান মিশাতে হবে। ভালোভাবে মেশানো হয়ে গেলে ১৫ মিনিটের জন্য মুখে লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। এরপর হালকা গরম পানিতে ফেসওয়াস সহ মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবেই প্রতিনিয়ত ব্যবহার করতে হবে।
দুধ ও জাফরানের এই প্যাকটি ব্যবহার করার মাধ্যমে অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়।
বয়সের ছাপ থেকে মুক্তি মেলে
দুধ ও জাফরানের মিশ্রণ ত্বকের যে টিস্যুগুলো বয়সের ছাপ ফেলে দিয়েছে সেগুলো ঠিক করতে সাহায্য করে।
ত্বককে মসৃণ করে
ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধি করার জন্য ও ত্বককে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ করার জন্য ও শুষ্ক ভাব দূর করার জন্য দুধ ও জাফরানের প্যাকের উপকারিতা অনেক।
পোড়া ভাব দূর করে
মুখের পোড়া ভাব দূর করার জন্য জাফরান ও দুধের মিশ্রণ খুবই উপযোগী। এর ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
দুধ ও জাফরান খাওয়ার উপকারিতা
- নিয়মিত জাফরানও দুধ খেলে স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটে।
- মেয়েদের অনেক শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এসব শারীরিক সমস্যার থেকে কার্যকরী উপায় হচ্ছে জাফরানের দুধ খাওয়া। প্রতিদিন যদি এক গ্লাস দুধের সাথে এক চা চামচ জাফরান মিশিয়ে খাওয়ানো যায় তবে মেয়েদের হরমোনাল বিভিন্ন রকম সমস্যা সমাধান হয়।
- ঠান্ডা বা জ্বর থেকে রক্ষা করে এই জাফরানের দুধ। হালকা গরম দুধের সাথে এক চিমটি জাফরান মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- যাদের রাত জাগার সমস্যা রয়েছে বা অনিদ্রা হয় তারা জাফরানের দুধ খেতে পারেন।
- জাফরান যেহেতু হার্ট এর উপকারের জন্য কার্যকর। গরম দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে হার্টের সমস্যাও দূর হয়।
- হজমের সমস্যা সমাধানের জন্য যদি আপনি জাফরান মিশ্রিত দুধের সাথে কিসমিস মিশান তবে আপনার হজমের সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।
এছাড়াও জাফরান মিশ্রিত দুধের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এবং অনেক অজানা উপকারও রয়েছে। তাই আপনাদের উচিত নিয়মিত জাফরান মিশ্রিত দুধ পান করার অভ্যাস করা।
রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন
প্রশ্নঃ জাফরান সবচেয়ে দামি মসলা কেন?
উত্তরঃ জাফরান একটি ফুল থেকে পাওয়া যায়। যার উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং বাজারজাত সহ সব প্রক্রিয়াতেই অনেক সময়ের প্রয়োজন পরে। তাই এই জাফরান ১ পাউন্ড তৈরীর জন্যই প্রায় ৭৫ হাজার ফুল উৎপাদনের প্রয়োজন। অনেক গাছ থেকে খুবই কম পরিমাণ জাফরান পাওয়া যায়।তাই জাফরান এত দামি মসলা
প্রশ্নঃ পৃথিবীর সেরা জাফরান কোন দেশে পাওয়া যায়?
উত্তরঃ পৃথিবীতে সবচেয়ে সেরা জাফরান পাওয়া যায় ইরানে। পৃথিবীতে প্রায় ৮০% জাফরান ইরানেই উৎপাদিত হয়।
প্রশ্নঃ জাফরানের উপকারিতা কি?
উত্তরঃ জাফরানের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা আমাদের উপরের আলোচনায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বিভিন্ন ধরনের রোগ এবং মানসিক সমস্যায় জাফরানের ব্যবহার হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়?
উত্তরঃ জাফরান ব্যবহার বা জাফরান দিয়ে প্যাক তৈরি করার ফলে ত্বক ফর্সা হয়ে থাকে। কিন্তু জাফরান খেলে যে ত্বক ফর্সা হবে এর কোন ব্যাখ্যা নেই।
প্রশ্নঃ জাফরান দুধ খাওয়ার নিয়ম কি?
উত্তরঃ জাফরান দুধ সাধারণত এক গ্লাস দুধের সাথে এক চিমটি জাফরান মিশিয়ে খেতে হয়। এই দুধ যদি রাতে ঘুমানোর আগে খেয়ে থাকেন তবে বেশি উপকার পাবেন।
জাফরান তেল তৈরীর পদ্ধতি
রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা জেনেছি। চলুন আমরা এখন আলোচনা করি জাফরান তেল সম্পর্কে। রূপচর্চায় জাফরান তেলের ও অনেক উপকার রয়েছে। এছাড়া জাফরান তেলের আরো অনেক ধরনের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। নিচে জাফরান তেল তৈরীর প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- জাফরান তেল তৈরীর জন্য প্রথমে একটি প্যান নিতে হবে।
- জাফরান তেল তৈরি করার জন্য ঘনঘন নাড়তে হয়। এজন্য একটি খুন্তি বা লেডল নিতে হবে।
- এরপর জাফরান তেল সংরক্ষণ করার জন্য একটি ভাল এয়ার টাইট পাত্র নিতে হবে।
- শুরুতেই পানি গরম করতে হবে।
- পানি গরম হয়ে গেলে ওই পানিতে এক চা চামচ জাফরান ফেলে দিতে হবে।
- এই মিশ্রণে আপনি বাদাম তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে মিশনটি আরো ভালো হবে।
- এজন্য প্রথমে পানির সাথে বাদাম তেল জ্বাল করবেন।
- এরপর জাফরানগুলো দিয়ে আরো ২০ মিনিট ফুটাতে থাকবেন।
- এরপর দেখতে পারবেন যে তেলের রং চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। আর তখন সেটি নামিয়ে আপনার নির্দিষ্ট পাত্রে ঢেলে দিবেন।
- তেলটি ভালো রাখার জন্য অবশ্যই এক সপ্তার ধরে ঠান্ডা জায়গায় রেখে দিতে হবে।
- এবং এক সপ্তাহ পর আপনার জাফরান তেলটি পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে।
জাফরান তেল এর ব্যবহার বিধি
জাফরান তেলের ব্যবহার অনেক। এর যেমন অনেক ওষুধি গুন আছে তেমনি তেলেও ঔষধি গুণ এর অভাব নেই। রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার থাকলেও চুলের যত্নে জাফরান তেলের ব্যবহার ব্যাপক। অনেক উপকার এই তেল থেকে পাওয়া যায়।
- চুল ওঠা বা চুল পড়ার সমস্যা কিংবা বড় না হওয়ার সমস্যা থেকেও এই জাফরান তেল এর ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।
- শরীরে ব্যথা থাকলে জাফরান তেল একটু গরম করে নিয়ে ওই ব্যথা জায়গায় মালিশ করলে আরাম পাবেন।
- কেনার আগে অবশ্যই জাফরান তেলের গুণগত মান যাচাই করে কেনা উচিত।
- সরাসরি এই তেল ব্যবহার করা যাবে না। মুখে ব্যবহারের জন্য অবশ্যই অন্য কিছুর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
- নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে এই তেলটি নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে রাখতে পারেন।
- রান্নার ক্ষেত্রেও জাফরান তেল ব্যবহার করা যায়।
- খুব বেশি তাপে তেল গরম করা ঠিক হবে না। এতে করে জাফরান তেলের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- মাথায় ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই তেল মালিশ করে আস্তে আস্তে মাথায় দিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
গর্ভকালীন সময়ের সুরক্ষার্থে জাফরান এর ব্যবহার
আমরা জাফরান রূপচর্চার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছি। আবার স্বাস্থ্যের জন্য জাফরান অনেক উপকারী। এমন কি গর্ভকালীন সময়েও মায়ের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য জাফরান এর যে ব্যবহার রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানি। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার খাওয়া জরুরী। এই সময় মায়ের শারীরিক এবং মানসিক উন্নয়ন তার বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
তাই পুষ্টিকর খাবার হিসেবে জাফরান একজন মায়ের জন্য উপযোগী একটি খাবার। জাফরান গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য কতটা উপকারী তার তালিকা নিচে দেওয়া হল।
- গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের একটি সমস্যা হয় তা হচ্ছে মুড সুইং। মন মেজাজ খারাপ থাকে। তাই যেহেতু স্নায়ু ঠান্ডা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থ রয়েছে জাফরানে এজন্য এই ক্ষেত্রে জাফরান খাওয়া খুবই উপকারী।
- গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা হয়। তাই এ সময় যদি জাফরান মিশ্রিত দুধ খেয়ে থাকেন তবে ঘুমের সমস্যা থেকে উপকার পাবেন।
- গর্ভকালীন সময়ে অনেক জায়গায় ব্যথা অনুভব করেন। জাফরান ব্যথা নাশক হিসেবেও অনেক কার্যকর।
- যেহেতু উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য জাফরান কার্যকর তাই এই সময় যদি জাফরান খান তবে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দূর হবে।
কিন্তু এখানেও মতভেদ আছে। অনেক ডাক্তার মনে করেন যে জাফরান শুধুমাত্র একটি মসলা। এর সাথে গর্ভকালীন স্বাস্থ্যের উন্নয়নের কোন সম্পর্ক নাই। অনেক গাইনোকোলজিস্ট বলেছেন গাইনী বিষয়ক কোন বইয়ে জাফরান খাওয়ার কথা উল্লেখ করা নাই। তাই অনেক ডাক্তার গর্ভকালীন সময়ে জাফরান খেতে নিষেধ করেন।
আরও পড়ুনঃ মাথার সামনের চুল গজানোর উপায়
জাফরান অবশ্যই একটি উপকারী মসলা। স্বাস্থ্যের অনেক উন্নয়নের জন্য এর ব্যবহার রয়েছে। তবে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়ার ভুল ইনফরমেশন এর মাধ্যমে গর্ভকালীন সময়ে জাফরান খাওয়ার রিক্স না নেওয়াই ভালো।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জাফরান ব্যবহারের নিয়ম
বাচ্চাদের জন্য জাফরান খাবার উপকারিতা অনেক। যেহেতু জাফরান একটি উপকারী মসলা তাই এই মসলা থেকে যেহেতু স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায় তাই একটি বাচ্চা ৬ মাস এর বেশি বয়স হয়ে গেলে চাইলেই তাকে তার খাবারের সাথে জাফরান মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
বাচ্চার অনেক শক্ত খাবার রয়েছে যেগুলোর সাথে একটু একটু করে জাফরান মিশিয়ে দেওয়া যায়।
- জাফরানের উপকার সম্পর্কে আমরা যেহেতু জানি তাই বলা যায় যে জাফরান খাবার খেলে একটি বাচ্চার হাড়ের গঠন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- ঠান্ডা জ্বর কাশি থেকে মুক্তি পায়।
- রাতের ঘুম ভালো হয় কান্নাকাটি কম করবে।
- এমন কি শরীরের অনেক ধরনের সমস্যাও দূর করে দেয়।
জাফরান বিষয়ে সাবধানতা
জাফরান বিষয়ক সাবধানতার কারণ হচ্ছে অনেক সময় বাজারে সঠিক জাফরান পাওয়া যায় না। দোকানদাররা বিভিন্ন রকম নকল জিনিসপত্র দিয়ে জাফরান বলে চালিয়ে দেন। এক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে কুসুম নামের এক ধরনের ফুলের শুকনো পাপড়ি যা জাফরানের মত দেখতে তা দোকানদাররা জাফরান বলে বিক্রি করছেন।
এছাড়াও আরেক ধরনের ফল রয়েছে যেগুলোর মধ্যেও লাল বর্ণের জাফরানের মত সরু সরু ফলা রয়েছে সেগুলো বিক্রি করছে জাফরান নাম দিয়ে। তাই জাফরান কেনার আগে বুঝতে হবে কোনটা আসল জাফরান।
মূলত জাফরানের স্বাদ ও গন্ধ দিয়ে চেনা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে আসল যে ইরানি জাফরান রয়েছে তা গন্ধে অনেক মিষ্টি এবং অনেক তীব্র হয়। আর এটি খেতে একটু তিতকুটে হয়ে থাকে। তাছাড়া একটি ছোট পরীক্ষার মাধ্যমেও বোঝা যায় কোনটি আসল জাফরান।
আসল জাফরান যদি ভিজিয়ে রাখা হয় তবে এর রং ছড়াতে অনেক সময় নেয়। এবং এর দন্ডগুলো তখনো লাল রংই থাকে। কিন্তু যেগুলো নকল সেইসব জাফরানের রং খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায় এবং জাফরানের দন্ডগুলো সাদা বর্ণের হয়ে যায়।
তাই যেহেতু জাফরান অনেক দামি একটি মসলা এজন্য অবশ্যই এই মসলাটি কেনার আগে সঠিকভাবে বুঝে পরীক্ষা করে কেনা জরুরী।
জাফরান বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্ন
প্রশ্নঃ জাফরান কখন খেতে হবে?
উত্তরঃ রাতে ঘুমানোর আগে জাফরান খেতে হবে।
প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় কি জাফরান খাওয়া যাবে?
উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার মধ্যে মতভেদ আছে। তাই না খাওয়াই ভালো।
প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ত্বক ফর্সা করার জন্য কি কি উপায় রয়েছে?
উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ত্বক ফর্সা করতে চাইলে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি বা চবিহীন প্রোটিন অথবা ফল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্নঃ জাফরান তেল কি চুল পড়া থেকে রক্ষা করে?
উত্তরঃ জাফরান তেল অনেক উপকারী কারন জাফরান একটি উপকারী মসলা। জাফরানের সব উপকারী গুণ জাফরান তেলে পাওয়া যায়। আর চুল পড়া থেকে রক্ষা করার জন্য জাফরান তেল অবশ্যই কার্যকর।
রূপচর্চায় জাফরান এর ব্যবহার বিষয়ে লেখক এর মন্তব্য
রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা জেনেছি এবং আরো জেনেছি যে জাফরানের স্বাস্থ্য উপকারিতা কতটা ব্যাপক। জাফরান একটি মসলা হলেও এর উপকারিতা এবং ভালো দিকের অভাব নেই। জাফরানের রূপচর্চা বিষয়ক পরামর্শ বেশিরভাগ মানুষ চেয়ে থাকেন। আমরা আশা করি এই ব্যাপারেও এই আর্টিকেলে অনেক তথ্য যোগান দিতে পেরেছি।
পরিশেষে জাফরান যেহেতু একটি দামি মসলা এবং অনেক দুই নম্বরী জাফরান পাওয়া যায় এজন্য অবশ্যই আপনাদের বুঝেশুনে যাচাই-বাছাই করে জাফরান কেনা জরুরী। মোটামুটি আমরা জাফরান বিষয়ক যত তথ্য দিয়েছি আশা করি আপনারা এই সকল তথ্য থেকে অবশ্যই আপনাদের প্রয়োজনীয় বিষয়ে জানার মাধ্যমে অবগত হয়েছেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url